*ইসলাম ধৰ্মে স্ত্ৰীর প্ৰতি স্বামীর হক কি কি*
✅ইসলামে একজন স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ১০টি দায়িত্ব এবং কর্তব্য
📗শরীয়তের হুকুম গুলোর মধ্যে বিবাহ অন্যতমো একটি হুকুম। বিবাহ হলো শরীয়ত মোতাবেক দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী এবং পুরুষের মধ্যে বৈধ সম্পর্ক আর এর মাধ্যমেই স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে তৈরি হয় বৈধ বন্ধন। পৃথিবীতে স্বামী এবং স্ত্রীর বন্ধন শ্রেষ্ঠ বন্ধন আর এই বন্ধন অটুট রাখতে প্রত্যেকের বেশ কিছু দায়িত্ব রয়েছে।
স্ত্ৰীর প্ৰতি স্বামীর হক
💞স্বামী-স্ত্রীর ভালো সম্পর্ক একটি সুন্দর পরিবার গড়ে তোলে আর একটি সুন্দর পরিবার একটি সুন্দর সমাজ গঠনের মূল নিয়ামক হিসাবে কাজ করে।
☪️এই কারণে ইসলাম প্রত্যেকের মাঝে ভালোবাসা তৈরির জন্য বেশ কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য দিয়েছে। ইসলাম প্রত্যেক স্বামীর দায়িত্ব কি হবে, তা খুব সুন্দর ভাবেই বলে দিয়েছে আর ইসলামের এসব হুকুম-আহকাম সমূহ যদি নারী-পুরুষ উভয় অনুসরণ করে, তবে ইনশা আল্লাহ একটি সুখী পরিবার তৈরি হবে।
📗কুরআন এবং হাদিস থেকে আমি বেশ কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য তুলে ধরেছি। সবগুলো বিষয় এই ছোটো লেখায় তুলে ধরা সম্ভব নয় তাই সামান্য কিছু তুলে ধরেছি।
স্ত্ৰীর প্ৰতি স্বামীর হক কি
💫*স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব*💫
✅*১.* স্ত্রীর ভরণ পোষণ করা প্রত্যেক স্বামীর দায়িত্ব তার স্ত্রীর ভরণ পোষণ করা। স্ত্রীর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, আরামদায়ক বাসস্থান, উপযুক্ত পোশাক এবং অনান্য সুযোগ সুবিধার ব্যাবস্থা করা। সর্বোপরি একজন স্বামীর দায়িত্ব হলো, স্ত্রীর দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করা। হাকীম ইবনু মু’আবিয়াহ আল-কুশাইরী (রহঃ) হতে তার পিতা থেকে বর্ণিতোঃ
❇️তিনি বলেন, একদা আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক রয়েছে? তিনি বললেনঃ “তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক দিবে। তার মুখমণ্ডলে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যেই রাখবে। (আবু দাউদ : ২১৪২)
স্ত্ৰীর প্ৰতি স্বামীর হক
💫স্ত্রীর চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই হালাল চাহিদা পূরণ করতে হবে। আর স্বামীর মৌলিক দায়িত্ব হলো হালাল পথে উপার্জন করা।
✅*২.* শারীরিক চাহিদা পূরণ মানুষের সামাজিক চাহিদার পাশাপাশি রয়েছে জৈবিক চাহিদা। অপরদিকে বিবাহ হলো এই জৈবিক চাহিদা পূরণের হালাল মাধ্যম। তাই স্বামীর অন্যতমো দায়িত্ব হলো স্ত্রীর যৌন চাহিদা পূর্ণ করা। পবিত্র কুরআনে এসেছে,
💞তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যাবহার করো। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যাবস্থা করো এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও। (বাকারা : ২২৩)
☪️ইসলামে স্ত্রীর এই চাহিদাকে অনেক বেশী গুরুত্ব প্রদান করেছে। হযরত উমর (রাঃ) আদেশ প্রদান করে দেন, কোনো বিবাহিতো পুরুষ তার স্ত্রীর নিকট থেকে ৪ মাসের বেশী আলাদা বা দূরে থাকতে পারবে না।
✅*৩.* স্ত্রীর কথায় মর্যাদা দেওয়া একজন স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীর কথাকে মর্যাদা দেওয়া। পারিবারিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। স্ত্রীর যেকোনো দাবিকে মূল্যায়ন করতে হবে। স্বামীকে মনে রাখতে হবে তার স্ত্রী হলো তার অর্ধাংশ। তাই স্ত্রী যেকোনো বিষয়ে মতামত প্রদান করার অধিকার রাখে।
স্ত্ৰীর প্ৰতি স্বামীর হক
✅*৪.* স্ত্রীর পিতা-মাতাকে সম্মান করা স্ত্রীর পিতা-মাতা তথা শ্বশুর শাশুড়িকে সম্মান করতে হবে। সেই সাথে স্ত্রীর পরিবারের অনান্য সদস্যের সাথেও সুন্দর সম্পর্ক রাখতে হবে। স্বামীর এমন কোনো ব্যাবহার বা আচারণ করা উচিত নয় যার দ্বারা স্ত্রীর পরিবারের কেউ কষ্ট পায়। পরিবারের কষ্ট তার স্ত্রীর অন্তরেও আঘাত করে। স্বামী যখন তার স্ত্রীর পরিবারের সাথে ভালো ব্যাবহার করবে তখন স্ত্রীও স্বামীর পরিবারের সাথে ভালো ব্যাবহারের উৎসাহ পাবে।
📚আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতোঃ_রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিনদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই পরিপূর্ণ ঈমানদার যিনি তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা চরিত্রবান। তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি- যে তার স্ত্রীর কাছে সবচেয়ে ভালো।
(তিরমিযী -১/২১৭-১৮; আহমাদ-২/২৫০, ৪৭২; আবূ দাঊদ হা. ৪৬৮২; মুসান্নাফে আবী শায়বাহ ১২/১৮৫/১; আবূ নাঈম তাঁর ‘আল-হিলইয়া’ –এর ৯/২৪৮; হাকিম-১/৩)
✅*৫.* স্ত্রীকে আঘাত কিংবা মারধর করা যাবে না এটা একদম প্রাথমিক বিষয় যে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে মারধর করবে না। কেনোনা একজন স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীর যত্ন এবং নিরাপত্তা রক্ষা করা। একজন রক্ষক কখনোই ভক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পারে না।
❇️মনে রাখতে হবে মেয়েটির পিতা-মাতা তার হাতে তুলে দিয়েছে মেয়েটির জীবনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য, শোষণের জন্য নয়। একজন স্বামীর উচিত তার স্ত্রীর একজন ভালো বন্ধু হওয়া। পরস্পরের মধ্যে যদি কখনো বাত বিতণ্ডা হয় তবে উভয় পক্ষকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আর কখনো স্ত্রীর মুখে আঘাত করা যাবে না।
📚আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতোঃ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও তাঁর কোনো খাদেমকে অথবা তাঁর কোনো স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং নিজো হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি। (সহীহুল বুখারী ৩৫৬০, ৬১২৬, ৬৭৮৬, ৬৮৫৩, মুসলিম ২৩২৮, আবূ দাউদ ৪৭৮৫, ৪৭৮৬, আহমাদ ২৩৫১৪, ২৪৩০৯, ২৪৪৬৪, ২৫৪২৫, ২৭৬৫৮, মুয়াত্তা মালেক ১৬৭১, দারেমী ২২১৮, গয়াতুল মারাম ২৫২, মুখতাসার শামাইল ২৯৯।)
✅*৬.* ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনে উৎসাহ প্রদান স্বামী দ্বীনদার হলে স্ত্রীকে দ্বীন পালনে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। স্ত্রীর ইসলামের জ্ঞান না থাকলে তাকে অবশ্যই ইসলামী জ্ঞান প্রদান করতে হবে। স্ত্রী যাতে প্রতিদিনের ইসলামী হুকুম পালন করতে পারে, এজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। সে যাতে নামায পরে এজন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
🌻এমন কিছু তার উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না যা তার ইসলাম পালনে বাঁধা তৈরি করে। তার পর্দার বিধান নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। তার বসোবাসের পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বামীর দায়িত্ব।
✅*৭.* স্ত্রীর গোপন কিছু অন্যের কাছে প্রকাশ করা যাবে না স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে যখন কোনো বিষয় সংঘটিতো হয়, তা কখনোই অন্যের কাছে প্রকাশ করা যাবে না। প্রত্যেক স্বামী এবং স্ত্রীর দায়িত্ব হলো তাদের গোপন কথা গোপন রাখা।
✅*৮.* কৃতোজ্ঞতা এবং প্রশংসা করা স্বামীর উচিত স্ত্রীর প্রতিটি ভালো কাজে উৎসাহ প্রদান করা। স্ত্রী যদি স্বামী কে কোনো উপহার প্রদান করে তবে অবশ্যই স্বামীর উচিত তা গ্রহণ করা। এছাড়া স্বামীর উচিত স্ত্রীকে উপহার প্রদান করা। স্ত্রীর বেশ কিছু কাজ যেমন:
*স্ত্রীর রান্নার প্রশংসা করা*
*সৌন্দর্যের প্রশংসা করা*
*শিশু-লালন পালনের প্রশংসা করা *তার কষ্টের জন্য কৃতেজ্ঞতা প্রকাশ করা
*সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, স্বামীর সামান্য একটু প্রশংসা স্ত্রীকে অনেক বেশী খুশি রাখে।
স্ত্ৰীর প্ৰতি স্বামীর হক
✅*৯.* স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া বা সময় ব্যয় করা
স্ত্রীকে সার্বক্ষনিক চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি রাখা যাবে না। এতে করে স্ত্রীর মন মেজাজ খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাকে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে যাওয়া কিংবা তার আত্মীয় স্বজনের বাসায় গমন করা যেতে পারে। এতে করে তার মধ্যে সতেজতা আসবে।
✅*১০.* হাসি মুখে কথা বলা স্ত্রীর সাথে হাসি মুখে কথা বলাটাও একটা ইবাদত। তার সাথে হাসি ঠাট্টা করা যেতে পারে। আনন্দ-ফুর্তি কিংবা শরীয়ত মোতাবেক যেকোনো বিনোদন বা খেলাধুলাও করা যেতে পারে।
📚আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতোঃ_তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলে তাঁকে অতিক্রম করে যাই।
(আবূ দাউদ ২৫৭৮, আহমাদ ২৩৫৯৮, ২৪৪৬০, ২৫৭২০, ২৫৭৪৫. ২৫৮৬৬, ইরওয়াহ ১৫০২, সহীহাহ ১৩১, আদাবুয যিফাফ ১৭১।)
✴️উক্ত হাদিসে দেখা যায় স্বয়ং রাসূল (সাঃ) তাঁর স্ত্রীর সাথে খেলাধুলা করতেন।
✅*শেষ কথা* স্বামী এবং স্ত্রী কখনোই একজন আরেক জনের প্রতিদন্ধি নয়। যদিও পশ্চিমা সমাজ ব্যাবস্থায়, স্বামী এবং স্ত্রী একজনকে আরেক জনের প্রতিদন্ধি হিসাবে দেখানো হয়। মনে রাখতে হবে, ইসলামে স্বামী এবং স্ত্রী হলো একজন আরেক জনের সহযোগী।🔚
স্ত্ৰীর প্ৰতি স্বামীর হক
0 Comments