রমজান মাসের আমল।The period of the month of Ramadan.

 *রমাযান মাসের আমল*⬇️

রমাযান মাসের আমল


☑*১)* রোযার গুরুত্ব ও ফযীলত: আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: (তরজমা) হে মুমিন সকল! তোমাদের উপর রমাযানের রোযা ফরয করা হলো, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। যেনো তোমরা মুত্তাকী হতে পারো। *[সূরা বাকারা-১৮৩]*


📕হুজুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি ঈমানের সহিত সওয়াবের আশায় রমাযান শরীফের রোযা রাখে, *(অন্য বর্ণনায়)* ঈমানের সহিত সওয়াবের আশায় তারাবীহের নামায পড়ে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। *[বুখারী শরীফ: হা: নং ১৯০১]*


*▶রোযার নিয়ত◀*


☑রমাযানের রোযার জন্য সুবহে সাদিকের পূর্বে মনে মনে এই নিয়ত করবে যে, ‘আমি আজ রোযা রাখবো’ অথবা দিনে আনুমানিক ১১টার পূর্বে মনে মনে এইরূপ নিয়ত করবে যে, আমি আজ রোযা রাখলাম। মুখে নিয়ত করা জরুরী নয়, বরং মুস্তাহাব। *[রদ্দুল মুহতার: ২/৩৭৭]*

🍔সাহরী ও ইফতার:🍔

রমাযান মাসের আমল

☑রোযাদারের জন্য সাহরী খাওয়া ও ইফতার করা সুন্নাত। বিশেষ কিছু না পেলে সামান্য খাদ্য বা কেবল পানি পান করলেও সাহরীর সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। ইফতার খুরমা কিংবা খেজুর দ্বারা করা সুন্নাত। তা না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। ইফতারের কিছুক্ষণ পূর্বে এ দু‘আটি বেশী বেশী পড়বে:


*يَا وَا سِعَ الْمَغْفِرَةِ اِغْفِرْلِىْ*


✳️*অর্থঃ-* হে মহান ক্ষমা দানকারী! আমাকে ক্ষমা করুন। *[শু‘আবুল ঈমান: ৩/৪০৭]*


*بِسْمِ اللهِ وَعَلى بَرَكَةِ اللهِ*

বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ। বলে ইফতার শুরু করবে এবং ইফতারের পর নিম্নের দুটি দু‘আ পড়বে:

রমাযান মাসের আমল

✅*১)* اَللّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلي رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ


✴️*অর্থ:-* হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোযা রেখেছি, এবং তোমারই দেয়া রিযিক দ্বারা ইফতার করলাম। *[আবূ দাঊদ: ১/৩২২]*


✅*২)* ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْـتَلَّتِ العُرُوْقُ وَثَبَتَ الاَ جْرُ اِنْ شَاءَ الله تَعَا لى


✴️*অর্থঃ-* পিপাসা দূরীভূতো হয়েছে, ধমনীসমূহ সতেজ হয়েছে, এবং ইনশাআল্লাহ রোযার সওয়াব নিশ্চিত হয়েছে। *[আবূ দাঊদ: ১/৩২১]*


✅*৩)* ইফতারীর দাওয়াত খেলে মেজবানের উদ্দেশ্যে এই দু‘আ পড়বে:


*اَفْطَرَعندكم الصائمون واكل طعامكم الابرار وصلت عليكم الملئكة*


*অর্থঃ-* আল্লাহ করুন যেনো রোযাদারগণ তোমাদের বাড়ীতে রোযার ইফতার করে এবং নেক লোকেরা যেন তোমাদের খানা খায় এবং ফেরেশতাগণ যেন তোমাদের উপর রহমতের দু‘আ করে। *[আস্সুনানুল কুবরা, নাসাঈ ৬:৮১, ইবনুস সুন্নীঃ ৪৩৩]*

রমাযান মাসের আমল

💠রোযার গুরুত্বপূর্ণ মাসাইল💠


☑*১)* রমাযানের প্রত্যেক দিনেই ঐ দিনের রোযার নিয়ত করা জরুরী। একদিনের নিয়ত পুরো মাসের রোযার জন্য যথেষ্ট নয়। *[দুররে মুখতার: ২/৩৭৯]*


☑*২)* যদি কেউ রোযার নিয়ত ব্যতীতো এমনিতেই সারা দিন না খেয়ে থাকে, তাহলে এটা রোযা বলে ধর্তব্য হবে না। *[রদ্দুল মুহতার: ২/৩৭৭]*


☑*৩)* সুবহে সাদিকের পর খানা-পিনা জায়িয নেই। আযান হোক বা না হোক। লোক মুখে যে প্রচলিতো রয়েছে যে, সুবহে সাদিকের পরেও আযান পর্যন্ত খাওয়া যায় তা সম্পূর্ণ ভুল। *[রদ্দুল মুহতার:২/৪১৯]*


☑*৪)* রোযা অবস্থায় গোসল করলে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। তবে কুলী করার সময় গড়গড়া করবে না এবং নাকে পানি দেওয়ার সময় নাকের মধ্যে জোরে পানি টানবে না। *[দুররে মুখতার: ২/৪১৯]*

রমাযান মাসের আমল

☑*৫)* রোযা অবস্থায় কাউকে রক্ত দিলে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। যদি রক্তদাতার শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকে। *[রদ্দুল মুহতার: ২/৪১৯]*


☑*৬)* রমাযান মাসের দিনে বা রাতে কেউ যদি বেহুঁশ হয়ে যায় এবং তা যদি কয়েকদিন বা অবশিষ্ট পুরো মাস পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে প্রথম যে দিন বেহুঁশ হয়েছে ঐ দিন বাদ দিয়ে বাকী দিনগুলির রোযার কাযা করতে হবে। *[দুররে মুখতার: ২/৪৩২]*


☑*৭)* রমাযান মাসে কেউ যদি পাগল হয়ে যায় তাহলে তার রোযা মাফ হয়ে যায়। তবে পুরো মাসের কোনো অংশে সুস্থ হলে পূর্বের রোযাগুলোর কাযা করতে হবে। *[আল বাহরুর রায়েক: ২/৫০৭]*


☑*৮)* হস্তমৈথুন করলে রোযা ভেঙ্গে যায় এবং তার কাযা আদায় করা জরুরী। এটা জঘন্য পাপকার্য। হাদীসে এইরূপ ব্যক্তির উপর লানত করা হয়েছে। *[দুররে মুখতার: ২/৩৯৯]*


☑*৯)* যদি রোযা অবস্থায় দাঁত দিয়ে রক্ত বের হয়েছে কণ্ঠনালীতে পৌঁছে যায় এবং তা পরিমাণে কম হয়, তাহলে রোযা নষ্ট হবে না। আর যদি রক্ত থুথুর সমান বা থুথু থেকে বেশী হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। এবং তার কাযা করতে হবে। *[দুররে মুখতার: ২/৩৯৬]*

রমাযান মাসের আমল

☑*১০)* বাচ্চাকে দুধ পান করালে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু নামায অবস্থায় দুধ পান করালে নামায ভেঙ্গে যায়। *[দুররে মুখতার: ২/৩৭১]*


☑*১১)* সফরে যদি কষ্ট হয় তাহলে রোযা না রাখা জায়িয আছে বরং না রাখা উত্তম। আর সফরে কষ্ট না হলে রোযা রাখাই হল মুস্তাহাব। তবে রোযা রেখে ভাঙ্গা ঠিক নয়। কেউ যদি ভেঙ্গে ফেলে তাহলে কাফফারা আসবে কি না এ ব্যাপারে মতোভেদ রয়েছে। যদিও গ্রহণযোগ্য মত হল যে, এই সূরতে কাফফারা ওয়াজিব হয় না। *[আহসানুল ফাতাওয়া ৪:৪৪]*


☑*১২)* কেউ রোযা রাখার পর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে গেলে অথবা পূর্বের রোগ বেড়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হলে রোযা ভাঙ্গা জায়িয আছে। পরবর্তীতে কাযা করতে হবে। একান্ত কাযা করার শক্তি না পেলে উক্ত রোযার ফিদিয়া দিতে হবে অর্থাৎ, প্রত্যেক রোযার বদলে একজন গরীবকে দু’বেলা খাওয়াতে হবে বা পোনে দু’সের আটা কিংবা তার মূল্য গরীবকে দিতে হবে। *[দুররে মুখতার: ২/৪২২]*


☑*১৩)* নাবালেগ ছেলে-সন্তানদেরকে রোযা রাখার হুকুম করতে হবে, যদি তারা এর শক্তি রাখে এবং এর দ্বারা তাদের কোনো ক্ষতি না হয়। আর দশ বৎসর বয়সে রোযা রাখতে শুরু না করলে প্রয়োজনে প্রহার করা যাবে। *[দুররে মুখতার: ২/৪০৯]*


☑*১৪)* রমাযানের দিনের বেলায় কোনো ছেলে বা মেয়ে বালেগ হলে বা কোনো কাফের মুসলমান হলে কিংবা মুসাফির সফর শেষ করলে বাকী দিন খানা-পিনা থেকে বিরতো থাকতে হবে।

রমাযান মাসের আমল

💫*ঋতুবতী মহিলার হুকুম💫*


✅*১)* ঋতুবতী কোনো মহিলার যদি দিনের বেলায় স্রাব বন্ধ হয়ে যায় তাহলে দিনের বাকী সময় খানাপিনা ইত্যাদি থেকে বিরতো থাকতে হবে। আর কোনো মহিলার রোযা অবস্থায় ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলে তার জন্য উপবাস থাকা জায়িয নেই। বরং সে চুপে চুপে খানা-পিনা করবে এবং পরবর্তীতে রোযাগুলির কাযা করবে। *[দুররে মুখতার: ২/৪০৮, ইমদাদুল আহকাম: ২/১৩৯]*


✅*২)* যদি কোনো মহিলা ঔষধ সেবন করে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখে তাহলে তাকে পুরো মাসই রোযা রাখতে হবে। তবে স্বাভাবিক নিয়মের বিপরীত করার দরুন কাজটি ঠিক হবে না। *[ফাতাওয়া রহীমিয়া: ৬/৪০৪]*

রমাযান মাসের আমল

*❎রোযা ভঙ্গ হওয়ার কারণসমূহ❎*


☑*১)* রোযা স্মরণ থাকা অবস্থায় কোনো কিছু খাওয়া বা পান করা অথবা স্ত্রী-সহবাস করা। এতে কাযা ও কাফফারা (একাধারে দুই মাস রোযা রাখা) ওয়াজিব হয়


☑*২)* নাকে বা কানে তৈল বা ঔষধ প্রবেশ করানো।


☑*৩)* নস্য বা হাপানী রোগীর জন্য ইনহেলার গ্রহণ করা।


☑*৪)* ইচ্ছাকৃতোভাবে মুখভরে বমি করা।


☑*৫)* বমি আসার পর তা গিলে ফেলা।


☑*৬)* কুলী করার সময় পানি গলার ভিতরে চলে যাওয়া।


☑*৭)* দাঁতে আটকে থাকা ছোলার সমান বা তার চেয়ে বড়ো ধরনের খাদ্যকণা গিলে ফেলা।


☑*৮)* মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুবহে সাদিকের পরে জাগ্রতো হওয়া।


☑*৯)* ধূমপান করা।


☑*১০)* ইচ্ছাকৃতোভাবে আগরবাতি কিংবা অন্য কোনো সুগন্ধি দ্রব্যের ধোঁয়া গলধকরণ করা বা নাকের ভিতরে টেনে নেওয়া।


☑*১১)* রাত্র মনে করে সুবহে সাদিকের পর সাহরী খাওয়া বা পান করা।


☑*১২)* সূর্যাস্তের পূর্বে সূর্য অস্তমিতো হয়েছে ভেবে ইফতার করা। এগুলোতে শুধু কাযা ওয়াজিব হয়, কাফফারা ওয়াজিব হয় না। কিন্তু রোযা ভেঙ্গে যাওয়ার পর দিনের বাকী সময় রোযাদারের ন্যায় পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরতো থাকতে হবে। *[রদ্দুল মুহতার ও দুররে মুখতার: ২/৪০২]*

রমাযান মাসের আমল

*রোযা মাকরুহ হওয়ার কারণসমূহ⚡*


✅*১)* মিথ্যা কথা বলা।


✅*২)* গীবত বা চোগলখোরী করা।


✅*৩)* গালাগালি বা ঝগড়া-ফাসাদ করা।


✅*৪)* সিনেমা দেখা বা অন্য কোনো কবীরা গুনাহে লিপ্ত হওয়া।


✅*৫)* সকাল বেলায় নাপাক অবস্থায় থাকা।


✅*৬)* রোযার কারণে অস্থিরতা বা কাতরতা প্রকাশ করা।


✅*৭)* কয়লা, মাজন, টুথ পাউডার, টুথপেষ্ট বা গুল দিয়ে দাঁত মাজা।


✅*৮)* অনর্থক কোনো জিনিস মুখের ভিতরে দিয়ে রাখা।


✅*৯)* অহেতুক কোনো জিনিষ চিবানো বা চেখে দেখা।


✅*১০)* কুলী করার সময় গড় গড়া করা।


✅*১১)* নাকের ভিতর পানি টেনে নেওয়া। (কিন্তু উক্ত পানি গলায় পৌঁছলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।)


✅*১২)* ইচ্ছাকৃতোভাবে মুখে থুথু জমা করে গিলে ফেলা।


✅*১৩)* ইচ্ছাকৃতোভাবে অল্প বমি করা। *[দুররে মুখতার: ২/৪১৬, বাদাইউস সানায়ে: ২/৬৩৫, কিতাবুল ফিকহ: ১/৯২৩]*

রমাযান মাসের আমল

🌻*যে সমস্ত কারণে রোযার ক্ষতি হয় না*🌻


☑*১.* ভুলক্রমে পানাহার করা।


☑*২.* আতর সুগন্ধি ব্যাবহার করা বা ফুল ইত্যাদির ঘ্রাণ নেওয়া।


☑*৩.* নিজো মুখের থুথু ও কফ জমা না করে গিলে ফেলা।


☑*৪.* শরীর বা মাথায় তৈল ব্যবহার করা।


☑*৫.* ঠাণ্ডার জন্য গোসল করা।


☑*৬.* ঘুমে স্বপ্নদোষ হওয়া।


☑*৭.* মিসওয়াক করা।


☑*৮.* অনিচ্ছাকৃতো বমি হওয়া।


☑*৯.* চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করা।


☑*১০.* যে কোনো ধরনের ইনজেকশন লওয়া। *[রদ্দুল মুহতার ও দুররে মুখতার: ২/৩৯৪]*🔚

রমাযান মাসের আমল

Post a Comment

0 Comments