বিদআত কি? বিদআতের ভয়াবহতা।What is Bidyat?



⁉*বিদআত কি⁉*👇🆗👇


📚আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতোঃ সর্বোত্তম কালাম হলো আল্লাহ্‌র কিতাব, আর সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হলো মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর পথ নির্দেশনা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো নতুনভাবে উদ্ভাবিতো পন্থাসমূহ। “তোমাদের কাছে যার ওয়াদা দেওয়া হচ্ছে তা ঘটবেই, তোমরা ব্যর্থ করতে পারবে না” (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮১)⏬


ফুটনোটঃ◀


✅[১] বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো : اَلشَّيْءُ الْمُخْتَرَعُ عَلٰى غَيْرِ مِثَالٍ سَابِقٍ অর্থাৎ পূর্ববর্তী কোনো নমুনা ছাড়াই নতুন আবিষ্কৃতো বিষয়। [আন-নিহায়াহ, পৃঃ ৬৯, কাওয়ায়েদ মা’রিফাতিল বিদআ’হ, পৃঃ ১৭]⏬


📗আর শরীয়তের পরিভাষায়- مَا أُحْدِثَ فِى دِيْنِ اللهِ وَلَيْسَ لَهُ أَصْلٌ عَامٌ وَلاَخَاصٌّ يَدُلُّ عَلَيْهِ. অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে নতুন করে যার প্রচোলন করা হয়েছে এবং এর পক্ষে শরীয়তের কোনো ব্যাপক ও সাধারণ কিংবা খাস ও সুনির্দিষ্ট দলীল নেই। [কাওয়ায়েদ মা’রিফাতিল বিদআ’হ, পৃঃ ২৪] এ সংজ্ঞটিতে তিনটি বিষয় লক্ষণীয় :⏬


✅১. নতুনভাবে প্রচলন অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কিরামের যুগে এর কোনো প্রচোলন ছিলো না এবং এর কোনো নমুনাও ছিলো না।


✅২. এই নবো প্রচোলিতো বিষয়টিকে দ্বীনের মধ্যে সংযোজন করা এবং ধারণা করা যে, এটি দ্বীনের অংশ।


✅৩. নবো প্রচোলিতো এ বিষয়টি শরীয়তের কোনো ‘আম বা খাস দলীল ছাড়াই চালু ও উদ্ভাবন করা।⏬


❇সংজ্ঞার এ তিনটি বিষয়ের একত্রিতো রূপ হলো বিদআত, যা থেকে বিরতো থাকার কঠোর নির্দেশ শরীয়তে এসেছে। কঠোর নিষেধাজ্ঞার এ বিষয়টি হাদীসে বারবার উচ্চারিতো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,


(وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ) رواه أبو داود والترمذى وقال حديث حسن صحيح.


‘‘তোমরা (দ্বীনের) নবো প্রচলিতো বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাকো। কেনোনা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ‘ত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা’’। [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৯১ ও সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬। তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।] নবী (সাঃ) তাঁর এক খুতবায় বলেছেন :⏬


إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ. رواه مسلم والنسائى واللفظ للنسائى.


‘‘নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো (দ্বীনের মধ্যে) নবো উদ্ভাবিতো বিষয়। আর নবো উদ্ভাবিতো প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হলো ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে।]⏬


বিদআতের চারটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে :◀


✅১. বিদআতকে বিদআত হিসেবে চেনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দলীল পাওয়া যায় না; তবে তা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে মূলনীতিগতো ‘আম ও সাধারণ দলীল পাওয়া যায়।⏬


✅২. বিদআত সব সময়ই শরীয়তের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও মাকাসিদ এর বিপরীত ও বিরোধী অবস্থানে থাকে। আর এ বিষয়টিই বিদআত নিকৃষ্ট ও বাতিল হওয়ার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ। এ জন্যই হাদীসে বিদআতকে ভ্রষ্টতা বলে অভিহিতো করা হয়েছে।⏬


✅৩. অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদআত এমন সব কার্যাবলী সম্পাদনের মাধ্যমে হয়ে থাকে যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবাদের যুগে প্রচোলিতো ছিলো না। ইমাম ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন,


 البِدْعَةُ عِبارةٌ عَنْ فِعلٍ لَمْ يَكُنْ فابتُدِعَ


‘বিদআত বলতে বুঝায় এমন কাজকে যা ছিলো না, অতঃপর তা উদ্ভাবন করা হয়েছে’। [তালবীসু ইবলীস, পৃ: ১৬]⏬


✅৪. বিদআতের সাথে শরীয়তের কোনো কোনো ইবাদাতের কিছু মিল থাকে। দুটো ব্যাপারে এ মিলগুলো লক্ষ্য করা যায়:


✳️প্রথমতো : দলীলের দিক থেকে এভাবে মিল রয়েছে যে, কোনো একটি ‘আম দলীল কিংবা সংশয় অথবা ধারণার ভিত্তিতে বিদআতটি প্রচোলিতো হয় এবং খাস ও নির্দিষ্ট দলীলকে পাশ কাটিয়ে এ ‘আম দলীল কিংবা সংশয় অথবা ধারণাটিকে বিদআতের সহীহ ও সঠিক দলীল বলে মনে করা হয়।⏬


দ্বিতীয়তো : শরীয়ত প্রণীতো ইবাদাতের রূপরেখা ও পদ্ধতির সাথে বিদআতের মিল তৈরী করা হয় সংখ্যা, আকার-আকৃতি, সময় বা স্থানের দিক থেকে কিংবা হুকুমের দিক থেকে। এ মিলগুলোর কারণে অনেকে একে বিদআত মনে না করে ইবাদাত বলে গণ্য করে থাকেন।⏬


বিদআত নির্ধারণে মানুষের মতপার্থক্য◀


👪বিদআত নির্ধারণে মানুষ সাধারণতোঃ তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত :


এক : দলীল পাওয়া যায় না এমন প্রতিটি বিষয়কে এক শ্রেণীর মানুষ বিদআত হিসেবে চিহ্নিতো করছে এবং এক্ষেত্রে তারা বিশেষ বাছ-বিচার না করেই সব কিছুকে (এমন কি মু‘আমালার বিষয়কেও) বিদআত বলে অভিহিতো করছে। এদের কাছে বিদআতের সীমানা বহুদূর বিস্তৃতো।


দুই : যারা দ্বীনের মধ্যে নবো উদ্ভাবিতো সকল বিষয়কে বিদআত বলতে রাজী নয়; বরং বড়ো বড়ো নতুন কয়েকটিকে বিদআত বলে বাকী সবকিছু শরীয়তভুক্ত বলে তারা মনে করে। এদের কাছে বিদআতের সীমানা খুবই ক্ষুদ্র।⬇️


তিন : যারা যাচাই-বাছাই করে শুধুমাত্র প্রকৃতো বিদআতকেই বিদআত বলে অভিহিতো করে থাকেন। এরা মধ্যম পন্থাবলম্বী এবং হকপন্থী।


▶️বিদআতের মৌলিক নীতিমালা◀️


🖊️বিদআতের তিনটি মৌলিক নীতিমালা রয়েছে। সেগুলো হলো :


✅১. এমন ‘আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা করা যা শরীয়ত সিদ্ধ নয়। কেনোনা শরীয়তের স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম হলো- এমন আমল দ্বারা আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা করতে হবে যা কুরআনে আল্লাহ নিজে কিংবা সহীহ হাদীসে তাঁর রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) অনুমোদন করেছেন। তাহলেই কাজটি ইবাদাত বলে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) যে আমল অনুমোদন করেননি সে আমলের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাত করা হবে বিদআত।⬇️


✅২.দ্বীনের অনুমোদিতো ব্যাবস্থা ও পদ্ধতির বাইরে অন্য ব্যাবস্থার অনুসরণ ও স্বীকৃতি প্রদান। ইসলামে একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, শরীয়তের বেঁধে দেওয়া পদ্ধতি ও বিধানের মধ্যে থাকা ওয়াজিব। যে ব্যক্তি ইসলামী শরীয়ত ব্যতীতো অন্য বিধান ও পদ্ধতি অনুসরণ করলো ও তার প্রতি আনুগত্যের স্বীকৃতি প্রদান করলে  সে বিদআতে লিপ্ত হলো।⬇️


✅৩. যে সকল কর্মকান্ড সরাসরি বিদআত না হলেও বিদআতের দিকে পরিচালিতো করে এবং পরিশেষে মানুষকে বিদআতে লিপ্ত করে, সেগুলোর হুকুম বিদআতেরই অনুরূপ। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭২৭৭

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)


📱"প্রচার করো যদিও একটি মাত্র আয়াতও হয়। (" সহিহ্ বুখারী ৩৪৬১).🔚

Post a Comment

0 Comments