সন্তান ভূমিষ্ঠের পর পিতা-মাতার করণীয় কিছু সুন্নাত সমূহ।

 



🌷*সন্তান ভূমিষ্ঠের পর পিতা-মাতার করণীয় ৬টি সুন্নাত:🌷👇⬇👇 🌹🆗🌹


🌎পৃথিবীজুড়ে মুসলমানদের ঘরে ঘরে প্রতিদিন আগোমন হচ্ছে নতুন মেহমান ও নতুন সন্তানের। কিন্তু আমরা কয়জন আছি যারা এ সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের সূচনা লগ্নে ইসলামি আদর্শের অনুশীলন করি? রাসূলুল্লাহ্ *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাতলানো সব সুন্নত গুলো পালন করি! পরিতাপের বিষয়, আমরা অনেকেই তা করি না। এর কারণ, সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে আমাদের উদাসীনোতা। তবে এটাও ঠিক যে, ইচ্ছা থাকা সত্বেও অনেকে না-জানার কারণে তা করতে সক্ষম হন না। চলুন সুন্নত ৬টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক--⤵


✅*১) নবোজাতকের কানে আযান দেওয়া:* হযরত আবু রাফে (রাদিআল্লাহু তা'আলা আ'নহু) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, “আমি রাসূলুল্লাহ্ *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আলীর পুত্র হাসানের কানে নামাযের আযানের মতো আযান দিতে দেখেছি, যখন হযরত ফাতেমা (রাদিআল্লাহু তা'আলা আ'নহা) তাকে জন্ম দেন।” হাদীসটিকে আবু দাউদ এবং তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী সহীহ বলেছেন। *[তিরমিযী, হাদীস নং- ১৫৫৩]


🌻সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এই আযান দিতে হবে। যেনো তাঁর কানে আল্লাহর মহত্বের প্রথম আওয়াজ প্রবেশ করে এবং শয়তান দূরে চলে যায়।


✅*২) তাহনীক করা:* খেজুর চিবিয়ে পানির মতো করে শিশুর মুখে দেওয়া যেনো এর কিছুটা তাঁর পেটে প্রবেশ করে। এটাকেই তাহনীক বলা হয়। তবে খেজুর না পাওয়া গেলে অন্য যে কোনো মিষ্টি দ্রব্য যেমন মধু বা অন্য কিছু দ্বারাও এভাবে তাহনীক করা যায়। তাহনীক করা সুন্নত এবং তা নেককার ব্যক্তি কর্তৃক হওয়া বাঞ্ছনীয়।


📚হযরত আবু মুসা (রাদিআল্লাহু তা'আলা আ'নহু) হতে বর্ণিতো, তিনি বলেন- “আমার ছেলে সন্তান হলে আমি তাকে নবীজী *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিয়ে আসি, তিনি তাঁর নাম রাখেন ইব্রাহীম এবং খেজুর দ্বারা তাহনীক করেন এবং তাঁর জন্য বরকতের করেন, তাঁর পর সন্তানকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন।” *[বুখারী-হাদীস নং৫৪৬৭, মুসলিম- হাদীস নং ২১৪৫]*


✅*৩) প্রথম দিনে নবোজাতকের নাম নির্ধারণ:* বাচ্চার নাম যেমন জন্মের সপ্তম দিন অর্থাৎ আক্বীক্বার দিন নির্ধারণ করা সুন্নত তেমন প্রথম দিনেও নাম রাখা বৈধ। নবীজী *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “রাতে আমার পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, আমি আমার পিতার নামে তাঁর নাম ইব্রাহীম রেখেছি”। *[বুখারী- হাদীস নং ১৩০৩, মুসলিম- হাদীস নং ২৩১৫]


✅*৪) সপ্তম দিনে আকীকা করা:* আকীকা করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। তাই যে ব্যক্তি আকীকা করার সামর্থ্য রাখে, সে যেনো অবশ্যই আকীকা করে। আর যার সামর্থ্য নেই তাঁর উপর আকীকা জরুরী নয়।


📚নবী করীম *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “নবোজাতকের আকীকা আছে। তাই তোমরা তাঁর পক্ষ হতে কুরবানী করো এবং তাঁর মাথার চুল পরিষ্কার কর। *[বুখারী, আকীকা, নং৫৪৭১]


📘তিনি আরোও বলেন: “প্রত্যেক বাচ্চা তাঁর আকীকার বিনিময়ে বন্ধক থাকে, সপ্তম দিনে তাঁর পক্ষ হতে জবাই করা হবে এবং তাঁর মাথা মুণ্ডন করা হবে এবং নাম রাখা হবে”। *[ইবনে মাজাহ, হাদীস নং৩১৬৫, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ]


✅*৫) নবোজাতকের মাথা মুণ্ডন এবং চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য দান করা:* জন্মগ্রহণের সপ্তম দিনে যেমন আকীকা করা সুন্নত, তেমনি সেদিন নবোজাতকের মা কর্তৃক সন্তানের চুল গুলো মুণ্ডন করা ও চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য সদকা করাও সুন্নত। হযরত আলী (রাদিআল্লাহু তা'আলা আ'নহু) বলেন, “আল্লাহর রাসূল *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসানের পক্ষ হতে ছাগল আকীকা করেন এবং ফাতেমা (রাদিআল্লাহু তা'আলা আ'নহা) কে বলেন- তাঁর মাথা মুণ্ডন করো এবং চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য সদকা করো”। *[তিরমিযী, অধ্যায়, আযাহী, হাদীস নং ১৫১৯]


✅*৬) খাতনা করা:* খাতনা করা প্রকৃতিগতো বিষয়, যা ইসলাম সমর্থন করেছে এবং তা গুরুত্বের সাথে পালন করেছে। তাই ফুকাহাদের মধ্যে ইমাম শাফেয়ী, মালিক ও আহমদ (রহঃ) এই আমলকে ওয়াজিব বলেছেন।


📚নবী করীম *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “পাঁচটি বিষয় স্বভাবগতো, খাতনা করা, নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করা, মোচ কর্তন করা, নখ কর্তন করা এবং বগলের লোম ছিঁড়ে ফেলা”। *[বুখারী, হাদীস নং ৫৮৯১, মুসলিম, অধ্যায়, ত্বাহারাহ ]


⭕খাতনা করার নির্দিষ্ট কোনো সময় সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিতো নয়, তবে উলামায়ে কেরামের মতে সাবালক হওয়ার পূর্বে তা করে নেওয়া উচিত।


☝আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের নবোজাতক সন্তান জন্মের পর এই ছয়টি সুন্নাতের উপর আমল করার তাওফীক দান করেন। (আমীন..!)🔚

Post a Comment

0 Comments