🌙*ইসলামে ব্যাবসার গুরুত্ব এবং ব্যাবসায় সফল হওয়ার ১৩টি দিক নির্দেশনা🌙👇⬇👇 🌹🆗🌹
💱নিঃসন্দেহে ব্যাবসা হলো, হালাল উপার্জনের অন্যতমো শ্রেষ্ঠ উপায়। তাই তো আল্লাহ তাআলা কুরআনে ব্যাবসাকে হালাল ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,
أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
*"আল্লাহ ব্যাবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন। *বাকারা: ২(৭৫)*
☝*তিনি আরোও বলেন*☝
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَن تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ
*“হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না তবে কেবলমাত্র পারষ্পারিক সম্মতিক্রমে ব্যাবসা করা হলে তাতে কোনো আপত্তি নাই। *(নিসা: ২৯)*
📚রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও যৌবন বয়সে ব্যাবসা করেছেন। মক্কার সাহাবিগণ অধিকাংশই ব্যাবসায়ী ছিলেন। তারা বছরে দু বার শীত ও গ্রীষ্মকালে শাম ও ইয়েমেন দেশ থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতেন-যা সূরা কুরায়শে বর্ণিতো হয়েছে। বড়ো বড়ো সম্পদশালী ব্যাবসায়ী সাহাবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) উসমান বিন আফফান (রাঃ) আব্দুর রহমান বিন আউফ, তালহা বিন উবাইদিল্লাহ, তালহা বিন যুবাইর, যুবাইর ইবনুল আওয়াম প্রমুখ সাহাবিগণ
🌷আমাদের পূর্বসূরি মহামতি ইমামগণও ব্যাবসা করতেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ইমাম মালেক বিন আনাস (রহঃ) ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক (রহঃ) প্রমুখো।
⭕তৎকালীন জাহেলি যুগ থেকে আরবে ব্যাবসা-বাণিজ্যে প্রাণ কেন্দ্র ছিলো উকাজ, মিজান্না, যুল মাজায, বনু কাইনুকা প্রভৃতি। সেখানে সাহাবিগণ ব্যাবসা-বাণিজ্য করাকে গুনাহের কারণ মনে করলে আল্লাহ তাআলা কুরআনের আয়াত নাজিল করে তাদের সেই সংকোচ উঠিয়ে নিয়ে সেগুলো ব্যাবসা করতে উৎসাহ দিলেন।
📗*এ প্রসঙ্গে আয়াত নাজিল হলো*
لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَبْتَغُوا فَضْلًا مِّن رَّبِّكُمْ ۚ فَإِذَا أَفَضْتُم
*“তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় কোনো গুনাহ নেই।
*(সূরা বাকারা: ১৯৮)*এটা ছিলো হজ্জের মৌসুমে।
📚*(সহিহ বুখারি-ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাবসায় বরকতের জন্য দুআ করেছেন।
📘তাছাড়া প্রায় সকল হাদিস ও ফিকহ এর কিতাবে কিতাবুল বুয়ু বা বেচাকেনা অধ্যায় রয়েছে। যেখানে মুহাদ্দিসগণ এ সংক্রান্ত অনেক হাদিস উল্লেখ করেছেন এবং ফকীহগণ ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাবসার বিভিন্ন দিক সবিস্তারে আলোচনা করেছেন।
এখান থেকেই ইসলামে ব্যাবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়।
❇*যাহোক, ব্যাবসায় সফলতা অর্জনের জন্য একজন ঈমানদার ব্যাবসায়ীর মধ্যে কতিপয় গুণ-বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি। নিম্নে এ সংক্রান্ত ১৩টি পয়েন্ট উপোস্থাপন করা হলো:*
✅১) ব্যাবসা শেখা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করা: ব্যাবসা করতে শেখা এবং এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞা অর্জনের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতার ঝুড়ি ভরতে হয়। তাই এক লাফে বড়োলোক হওয়ার চিন্তা মাথা থেকে সরাতে হবে। অভিজ্ঞতা অর্জন করা ব্যতীতো কখনোই সমস্ত মূলধন প্রাথোমিক অবস্থায় বিনিয়োগ করা উচিৎ নয়। প্রাথোমিকভাবে অল্প পরিসরে কাজ শুরু করতে হবে। তারপর যখন অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকবে, তখন ধীরে ধীরে মূলধনের পরিমাণও বৃদ্ধি করতে হবে।
অনেকেরই সুন্দর সুন্দর বিজনেস আইডিয়া থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন ছাড়াই তারা বিশাল অংকের অর্থ ইনভেস্ট করে ফেলে। অবোশেষে বড়ো ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে নিজে মরে, পরিবারকেও মারে। যেমন কেউ ড্রাইভিং না শিখে গাড়িয়ে নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে এক্সিডেন্ট করে নিজে মরে-অন্যকেও মারে। (আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন)
❇মোটকথা, ব্যাবসার ক্ষেত্রে সুন্দর পরিকল্পনার পাশাপাশি ব্যাবসা সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
✅২) পরিকল্পনা: *নিজস্ব আর্থিক অবস্থা, ব্যাবসার জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন, জনোবল ও মান সম্মতো পণ্যের সহজলভ্যতা ইত্যাদি দিক বিবেচনা করে সুন্দরভাবে ব্যাবসায়িক পরিকল্পনা সাজাতে হবে। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে, ব্যাবসায়িক সফলতা বিষয়ে গবেষকদের লিখিতো বই পড়া যেতে পারে, ইউটিউবে বিজনেস প্ল্যান, বিজনেস আইডিয়া, অ্যাডভার্টাইজমেন্ট, ব্যাবসায় সফলতা সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও দেখা বা এ সংক্রান্ত কোনো কর্মশালায় অংশ নেওয়া যেতে পারে।
✅৩) সতোতা ও সত্যবাদিতা: *সত্যবাদিতা তথা কথা-কাজে মিল রাখা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যিক গুণ তো বটেই তবে ব্যাবসায় সাফল্যের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেনোনা এটি ব্যাসায়িকের প্রতি গ্রাহকের আস্থা এনে দেয়।
✅৪) আমানতদারিতা (বিশ্বস্ততা): *আমানতদারিতা না থাকা মুনাফেকের আলামত। সুতরাং চোরাকারবারি, মুনাফাখোরি, মজুদদারি, কালোবাজারি, পণ্যে ভেজাল দেওয়া, ওজনে কারচুপি করা, নকল করা; ধোঁকা, প্রতারণা ও ঠকবাজির আশ্রয় নেওয়া, দামে হেরফের করা প্রভৃতি অসাধুতা ইত্যাদি একজন মুসলিম হিসেবে তো অবশ্যই পরিত্যাজ্য একজন সৎ ব্যাবসায়ী হিসেবেও পরিত্যাজ্য।
🌺সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততা এ দুটি গুণ কেবল দুনিয়ায় সম্মান ও সফলতা অর্জনের কারণ নয় বরং আখিরাতেও বিশাল মর্যাদা লাভের কারণ। যেমন হাদিসে বর্ণিতো হয়েছে, আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) হতে বর্ণিতো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الأَمِينُ مع النَّبيِّينَ والصِّدِّيقِينَ والشُّهداءِ
“সত্যবাদী ও আমানতদার (বিশ্বস্ত) ব্যাবসায়ী
(আখিরাতে) নবী, সিদ্দিক এবং শহিদগণের সঙ্গে অবস্থান করবে।”*(জামে তিরমিযী: ৩/৫১৫ (১২০৯), সহিহ তারগিব-সহিহ লি গাইরিহ ১৭৮২) সুবহানআল্লাহ! একজন সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যাবসায়ীর জন্য এর চেয়ে বড়ো মর্যাদার বিষয় আর কী হতে পারে!
✅৫) গ্রাহকের সাথে হাসিমুখে কথা ও সুন্দর আচরণ: *হাদিসে হাসি মুখে কথা বলাকে সাদকার সমোপরিমাণ সওয়াব এবং সুন্দর আচরণকে জান্নাতে প্রবেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতোপক্ষে যার আচরণ যতো বেশি সুন্দর সবাই তাকে ততো বেশি ভালোবাসে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। দোকানের সেলস ম্যান যদি গ্রাহকদের সাথে হাসিমুখে কথা না বলে এবং ভদ্র ব্যাবহার না করে তাহলে কেউ তার কাছে আসবে না।
✅৬) ধৈর্য ও কঠোর পরিশ্রম* (অলসতাকে বিদায় জানানো)। বিল গেটস বলেন, “সাফল্যের জন্য কখনোই দ্রুতো পদোক্ষেপ নিবেন না। সাফল্যের একটি মূল উপাদান হলো ধৈর্য।”
✅৭) ব্যাবসায় উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও সৃজনশীলতা: *ব্যাবসায় এ দুটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাবসায় সফলতা পেতে সব সময় কিছু নতুনত্ব থাকা প্রয়োজন। যেমন: নতুন কালেকশন, বিশেষ ছাড়, হোম ডেলিভারি, ফ্রি সার্ভিস, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবহার, অনলাইন ওয়ার্ডার ইত্যাদি। বিভিন্ন উপলক্ষে গ্রাহক আকৃষ্ট করার জন্য কিছু কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে তা গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
✅৮) গ্রাহকদের উন্নতোমানের সেবা ও তাদের সন্তুষ্টি অর্জন: *গ্রহককে কোনো কিছুর প্রতিশ্রুতি দিলে তা রক্ষা করা, পণ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে বা কোনো কিছু খুঁজে পেতে ক্রেতাকে সাহায্য করা, তার কথা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা, তাকে কেয়ার করা ইত্যাদি ব্যাবসায়িক সাফল্য এনে দিতে বিরাট সাহায্য করে।
✅৯) গ্রাহকদের সমালোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করা: *গ্রাহকদের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সমালোচনা এবং খারাপ প্রতিক্রিয়াগুলোকে ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করে সেগুলোকে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের প্রভাবক হিসেবে ব্যাবহার করতে হবে।
✅১০) বাজারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে যথাসময়ে যথোপযুক্ত পণ্য সরবরাহ করা: *ব্যাবসায়িক সাফল্যের জন্য বাজারের হালচাল বুঝে সঠিক সময়ে সঠিক মানের পণ্য বা সেবা সঠিক সময়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
✅১১) মান সম্মতো পণ্য (Best Products): *মানুষের চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে মান সম্মতো পণ্য আমদানি করতে হবে। তবে অবশ্যই ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম কোনো পণ্য ক্রয় বা বিক্রয় করা জায়েজ নাই।
✅১২) প্রতিযোগিতা মূলক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা: *গ্রাহকদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে যথাসম্ভব প্রতিযোগিতা মূলক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করার চেষ্টা করতে হবে।
✅১৩) দুআ: *সর্বোপরি আল্লাহর নিকট হালাল রিজিক ও ব্যাবসায়িক সাফল্যের জন্য দুআ করা জরুরি। কেনোনা ব্যাবসায় সব সময় লাভ হবে এমনটা আশা করা ঠিক নয় বরং এখানে লোকসানের ঝুঁকিও আছে। সে মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। আর মনে রাখতে হবে, আমাদের দেহে রূহ ফুঁকার আগেই মহান আল্লাহ আমাদের রিজিকের ফায়সালা করে রেখেছেন। কিন্তু আমাদের কর্তব্য, যথানিয়মে কাজ করা এবং প্রয়োজনীয় চেষ্টা ও পরিশ্রম করা। সফলতা দেওয়ার মালিক মহান আল্লাহ। তিনি না দিলে আমরা শতো চেষ্টা করেও একটা কানাকড়িও অর্জন করতে পারবো না। এই বিশ্বাস মাথায় রেখেই আমাদেরকে কাজ করতে হবে। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।🔚
0 Comments