🔥*গীবত বা পরোনিন্দার ভয়াবহ পরিণাম:🔥*👇⬇👇 🌹🆗🌹
📚বিশিষ্ট সাহাবি হযরত মায়েয আসলামি (রাযি:) কর্তৃক ব্যভিচার সংঘটিত হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ভিতরের ঈমান এ অপরাধ লুকিয়ে রাখতে দেয়নি। তিনি ভীষণ মর্মাহত ও অনুতপ্ত হলেন। তাই নবী কারীম *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* এর কাছে এসে ঘটনার প্রায়শ্চিত্যের লক্ষ্যে স্বীকারোক্তি দেন। রাসুলুল্লাহ্ *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* বারবার তার কথা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি নিজের স্বীকারোক্তিতে অবিচল ও অটুট ছিলেন। দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, পৃথিবীর কোনো শাস্তিকে আমি ভয় পাই না। তবুও আখেরাতে মহান আল্লাহর দরবারে আমাকে যেনো লজ্জিত না হতে হয়। বিধান অনুযায়ী পাথর মেরে তাঁর শাস্তি বাস্তবায়ন করা হয়।⏬
💐তখন দুজন সাহাবি তার গীবত শুরু করলো। তারা বললো, লোকটির দোষ আল্লাহ্ পাক গোপন করেছিলেন। কিন্তু সে নিজেই তা প্রকাশ করে দিয়েছে। তাই কুকুরের মতো পাথর নিক্ষেপ করে তাকে হত্যা করা হয়। রাসুলুল্লাহ্ *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* এর কানে তাদের গীবতের সংবাদ পৌঁছে গেল।⏬
📚রাসুলুল্লাহ্ *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* কিছু দূরে একটি মৃত গাধা দেখতে পেলেন। গাধাটি ফুলে গেছে। এক পা উপরের দিকে উঠে গেছে। রাসুলুল্লাহ্ *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* গীবতকারী দুজনকে ডেকে এনে বললেন, তোমরা এ গাধার গোশত খাও। এর গোশত মুখে করে নিয়ে যাও।⏬
👪তারা বললো, হে আল্লাহর রাসুল! এ মৃত ও গলিতো গাধার গোশতো কে খেতে পারবে?! রাসুলুল্লাহ্ *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* বললেন, তোমরা একটু আগে মায়েযের গীবত করেছো। অথচ গীবত করা মৃত গাধার গোশতো খাওয়ার চেয়েও জঘন্য মহাপাপ।⏬
📚অতঃপর রাসুলুল্লাহ্ *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* মায়েযের মর্যাদা সম্পর্কে বললেন, আল্লাহর কসম! মায়েয এখন জান্নাতের নদীসমূহে সাঁতার কাটছে। মনোরম উদ্যানে বিচরণ করছে। *[আবু দাউদ; باب رَجْمِ مَاعِزِ بْنِ مَالِكٍ]*⏬
*📚গীবতকারী মুনাফেক:⬇⬇*
📚হাদীসে গীবতকারীকে মুনাফেক বলা হয়েছে। আর কাবা শরিফের চেয়েও বেশি মর্যাদা একজন মুসলমানের।
*عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ : صَعِدَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمِنْبَرَ فَنَادَى بِصَوْتٍ رَفِيعٍ ، فَقَالَ : ” يَا مَعْشَرَ مَنْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ ، وَلَمْ يُفْضِ الْإِيمَانُ إِلَى قَلْبِهِ ، لَا تُؤْذُوا الْمُسْلِمِينَ ، وَلَا تُعَيِّرُوهُمْ ، وَلَا تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ ، فَإِنَّهُ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللَّهُ عَوْرَتَهُ ، وَمَنْ تَتَبَّعَ اللَّهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِي جَوْفِ رَحْلِهِ ”* .
*قَالَ : وَنَظَرَ ابْنُ عُمَرَ يَوْمًا إِلَى الْبَيْتِ أَوْ إِلَى الْكَعْبَةِ ، فَقَالَ : مَا أَعْظَمَكِ وَأَعْظَمَ حُرْمَتَكِ ، وَالْمُؤْمِنُ أَعْظَمُ حُرْمَةً عِنْدَ اللَّهِ مِنْكِ*
✳*অর্থ:-* হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযি:) বর্ণনা করেন, রাসুলে কারীম *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* মিম্বরের উপর আরোহণ করলেন। উঁচু আওয়াজে ডাক দিলেন, হে লোকসকল! যারা মুখেমুখে ইসলাম গ্রহণ করেছো কিন্তু অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না। তাদেরকে লজ্জিত করবে না। তাদের দোষত্রুটির পেছনে লেগে থাকবে না। কারণ, যে তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের দোষ তালাশ করে আল্লাহও তার দোষ তালাশ করেন। আর আল্লাহ যার দোষ তালাশ করবেন তাকে নিজের ঘরে হলেও লজ্জিতো করবেন।
বর্ণনাকারী বলেন, একদিন আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযি:) বায়তুল্লাহ তথা কেবলার দিকে তাকিয়ে বলছিলেন, তোমার মর্যাদা ও সম্মান কতোই না বেশি! কিন্তু একজন মুমিনের মর্যাদা আল্লাহর কাছে তোমার থেকেও অনেক বেশি। *[সুনানে তিরমিযি, হাদীস : ২০৩২, অধ্যায় : ما جاء في تعظيم المؤمن]*⏬
❇বুঝা গেলো, যারা গীবত করে তারা মুনাফেক।
*📚গীবত ব্যভিচার থেকেও মারাত্মক:⬇*
🔥গীবত ও পরোনিন্দা করা যিনা–ব্যভিচার থেকেও মারাত্মক ও ভয়াবহ পাপ। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাযি) হতে বর্ণিত, রাসুলে কারীম *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-⤵
*الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا*
✳*অর্থ:-* গীবত করা যিনা থেকেও মারাত্মক গোনাহ। *[কানযুল উম্মাল : ৮০২৬]*
✅কারণ, যিনার মাধ্যমে কেবল আল্লাহ্ অবাধ্যতা ও শয়তানের অনুসরণ হয়। আর গীবতের দ্বারা আল্লাহর অবাধ্যতার পাশাপাশি বান্দার অধিকারও বিনষ্ট করা হয়। তাওবা করলে আল্লাহর অধিকার ক্ষমা হয়ে যায়। কিন্তু বান্দা নিজের অধিকার ক্ষমা না করলে আল্লাহও তা ক্ষমা করেন না। সুতরাং কারোও গীবত করা হয়ে গেলে তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেওয়া আবশ্যক। নয়তো কেয়ামতের দিন সে গীবতকারীর আঁচল টেনে ধরবে। তখন কোনো সাহায্যকারী থাকবে না। নিরূপায় হয়ে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করবে। তাঁর মহান দরবারে ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে। তখন আল্লাহ্ তা'আলা তাকে বলবেন:⏬
❇‘আজ সকল মানুষ তার আমল অনুযায়ী ফল ভোগ করবে। প্রত্যেকেই নিজো অপরাধ ও গোনাহ মোতাবেক শাস্তি পাবে। কারোও প্রতি বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে না।’ আল্লাহর ঘোষণা শুনে লোকটি হতাশার সাগরে নিমজ্জিতো হবে। আক্ষেপ করে বলবে, যদি লোকটির গীবত না করতাম!⏬
*📚গীবতকারী সর্বাগ্রে জাহান্নামে যাবে:⬇⬇*
🔥গীবতকারী তাওবা ছাড়া মারা গেলে সবার আগে জাহান্নামে যাবে। বিশিষ্ট তাবেয়ি কা’বে আহবার (রহ:) বলেন, আমি পূর্ববর্তী নবীদের কিতাবাদি পড়েছি। গীবত সম্পর্কে সেগুলোতে লেখা রয়েছে--⤵
*وَأَوْحَى اللَّهُ إلَى مُوسَى عَلَيْهِ وَعَلَى نَبِيِّنَا الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ مَنْ مَاتَ تَائِبًا مِنْ الْغِيبَةِ فَهُوَ آخِرُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ وَمَنْ مَاتَ مُصِرًّا عَلَيْهَا فَهُوَ أَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ النَّارَ*
✳*অর্থ:-* আল্লাহ্ তা'আলা হযরত মুসা (আ:) এর কাছে এ মর্মে ওহি প্রেরণ করেন, যে ব্যক্তি তাওবা না করে বারবার গীবত করতে থাকবে সে সবার আগে জাহান্নামে যাবে। আর গীবত করে তাওবা করলেও সবার শেষে জান্নাতে যাবে। *[এহয়াউ উলমুদ্দীন : খ. ৩, পৃ. ১৪২]*⏬
*📚কবরের একতৃতীয়াংশ শাস্তি গীবতের:⬇⬇*
📚তাফসিরবিদ হযরত কাতাদা (রহ:) থেকে বর্ণিত আছে--⤵
*ذُكِرَ لَنَا أَنَّ عَذَابَ الْقَبْرِ ثَلَاثَةُ أَثْلَاثٍ : ثُلُثٌ مِنْ الْغِيبَةِ ، وَثُلُثٌ مِنْ الْبَوْلِ ، وَثُلُثٌ مِنْ النَّمِيمَةِ.*
✳*অর্থ:-* কবরের তিনভাগের একভাগ শাস্তি গীবতের কারণে। একতৃতীয়াংশ চোগলখুরির দরুন। আরেক তৃতীয়াংশ পেশাবের জন্যে। *[الزواجر عن اقتراف الكبائر খ.২, পৃ. ২৩৯]*
*📚গীবতকারী মরা মানুষের গোশতো খাবে:⬇⬇*
📚বিশিষ্ট সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রাযি:) বলেন, রাসুলে কারীম *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* বলেছেন-⤵
*مَنْ أَكَلَ لَحْمَ أَخِيهِ فِي الدُّنْيَا قُرِّبَ إلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ . فَيُقَالُ لَهُ : كُلْهُ مَيِّتًا كَمَا أَكَلْته حَيًّا .فَيَأْكُلُهُ وَيَضِجُّ*
✳*অর্থ:-* যে ব্যক্তি দুনিয়ায় তাঁর ভাইয়ের গোশতো খায় অর্থাৎ তার গীবত করে, কেয়ামতের দিন তার সামনে এ ব্যক্তির গোশতো উপস্থিত করা হবে। এবং তাকে বলা হবে, এখন তার গোশতো খাও; যেভাবে দুনিয়ায় জীবিত থাকতে তার গোশতো খেয়েছো। সে তখন গোশতো খাবে ও মারাত্মক লজ্জিত হবে। *[তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪২৯৪]*⏬
📚বিশিষ্ট সাহাবি হযরত কাতাদাহ (রাযি:) বলেন-⤵
*كما يمتنع أحدكم أن يأكل لحم أخيه ميتا كذلك يجب أن يمتنع من غيبته حيا.*
✳*অর্থ:-* মানুষ যেভাবে তার মৃত ভাইয়ের গোশতো ভক্ষণ করা অপছন্দ করে, তার জন্যে আবশ্যক হলো গীবত থেকে নিজেকে বিরতো রাখা। *[ইমাম কুরতুবি (রহ.) রচিত আল-জামে লি আহকামিল কুরআন : খ. ১৬, পৃ. ৩৩৫]*⏬
📚হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি:) বলেন-⤵
*إذَا أَرَدْت أَنْ تَذْكُرَ عُيُوبَ صَاحِبِك فَاذْكُرْ عُيُوبَك.*
✳*অর্থ:-* যখন তুমি তোমার পরিচিত কারও গীবত করার ইচ্ছে করো, তখন নিজের দোষসমূহের কথা স্মরণ করো। *[এহয়াউ উলুমুদ্দীন : খ.৩, পৃ. ১৪৩]*
☝আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে হেফাজত করেন। আমীন..!🔚
0 Comments