📗গুরুত্বপূর্ণ কিছু সূরার ফজিলত📗
📗সূরা ফাতিহা: পুরো কুরআন শরীফের গুরুত্বপূর্ণ সূরা ফাতিহা। এ সূরার মাধ্যমেই সূচনা হয়েছে পবিত্র কুরআনের। সূরাটিকে আল কুরআনের সার সংক্ষেপও বলা হয়। এ সূরা নাজিল হয়েছে মানুষের সার্বিক কল্যাণ মুক্তি ও পথপ্রদর্শক হিসেবে। সূরাটি ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অন্য সব সূরার আলাদা।
✳সূরা_ফাতিহার_বৈশিষ্ট্য:✳
✅১) এই সূরা কুরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সূরা। তাওরাত, জবুর, ইনজিল, কুরআন কোনো কিতাবে এই সূরার তুলনীয় কোনো সূরা নেই। (বুখারি, মিশকাত : ২১৪২)
✅২) এই সূরা এবং সূরায়ে বাকারা’র শেষ তিনটি আয়াত হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ নূর, যা ইতিপূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। (মুসলিম শরীফ : ৮০৬,)
✅৩) যে ব্যক্তি নামাজে সূরা_ফাতিহা পাঠ করলো না, তার সালাত অপূর্ণাঙ্গ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ কথাটি তিনবার বললেন। (মিশকাত : ৮২৩)
সূরার ফজিলত
✅৪) আবু সা‘ঈদ খুদরী (রা.) বলেন, একবার এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতিকে শুধুমাত্র সূরায়ে_ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন এবং তিনি সুস্থ হন। (বুখারি শরীফ : ৫৪০৫)
📘সুরা_ফাতিহার বিশেষ মর্যাদা হলো, আল্লাহ এটিকে নিজের ও নিজের বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। একে বাদ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। সেজন্যই এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘উম্মুল কুরআন’। পবিত্র কুরআন মূলতো তিনটি বিষয়ে বিন্যস্ত। তাওহীদ, আহকাম ও নসীহত। সূরায়ে ইখলাছে ‘তাওহীদ’ পূর্ণাঙ্গভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সূরায়ে ফাতিহায় তিনটি বিষয় একত্রে থাকার কারণে তা ‘উম্মুল কুরআন’ হওয়ার মহত্তম মর্যাদা লাভে ধন্য হয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবী : ১৪৮)
সূরার বাকারার ফজিলত
📕সূরা ফাতিহার_ফজিলত :
সুরা ফাতিহার ফজিলত অপরিসীম। এর ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিন্মরূপ।
✅১) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ উম্মুল কুরআনের মতো তাওরাত ও ইনজিলে কিছু নাযিল করেননি। এটিকেই বলা হয়, ‘আস-সাব‘উল মাসানী’ (বারবার পঠিত সাতটি আয়াত), যাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। আর আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, সে যা চাইবে’। (নাসায়ী শরীফ : ৩১৯)
✅২) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা সূরা_ফাতিহা পড়ো। কোনো বান্দা যখন বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল আলামীন, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বলে, আর-রহমা-নির রহীম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াউমিদ্দীন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। বান্দা যখন বলে, ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যা কানাস্তাইন, আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। বান্দা যখন বলে, ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম.. (শেষ পর্যন্ত)। আল্লাহ বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। (মুসলিম শরীফ : ৩৯৫)
সূরার ফাতিহার ফজিলত
✅৩) ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে জিবরাঈল (আঃ) উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ জিবরাঈল (আঃ) ওপর দিকে এক শব্দ শুনতে পেলেন এবং চক্ষু আকাশের দিকে করে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা পূর্বে কোনোদিন খোলা হয়নি। সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এসে বললেন, ‘আপনি দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে। তা আপনার পূর্বে কোনো নবীকে প্রদান করা হয়নি। তা হচ্ছে সূরা_ফাতিহা এবং সূরা_বাকারার শেষ দু’আয়াত। (মুসলিম শরীফ : ৮০৬)
✴সূরা আল বাকারা:✴
📗সূরা আল বাকারা মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সূরার আয়াত সংখ্যা হলো ২৮৬টি, কোরআন শরিফের দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে বড়ো সূরা। এই সূরা প্রথম পারা থেকে শুরু করে তিন নম্বর পারার আট পৃষ্ঠায় গিয়ে শেষ হয়েছে। ইসলামের মৌলিক নীতি, বিশ্বাস ও শরিয়তের বিধিবিধানের যতটুকু বিস্তারিত বর্ণনা সূরা বাকারায় করা হয়েছে, ততোটুকু আলোচনা অন্য কোনো সূরায় করা হয়নি। এই সূরার মধ্যে আয়াতুল কুরসি নামে যে আয়াতখানা তা কোরআনের অন্য সব আয়াত থেকে উত্তম এবং শেষের যে দুইখানা আয়াত আছে সেটাও মহান আল্লাহর বিশেষ রহমতের ভাণ্ডার থেকে দেওয়া হয়েছে। এই আয়াতেরও অনেক ফজিলত আছে। এ সূরায় এক হাজার আদেশ, এক হাজার নিষেধ, এক হাজার হেকমত এবং এক হাজার সংবাদ ও কাহিনী আছে।
সূরার ফজিলত
📙সূরা বাকারার ৬৭ থেকে ৭৩নং পর্যন্ত আয়াতে একটি গাভীর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যে গাভীটি জবেহ করার জন্য বনি ইসরাইলকে আদেশ করা হয়েছিলো। সে হিসাবেই এ সূরার নাম সূরা বাকারা। আরবিতে বাকারা অর্থ গাভী (গরু)।
✳সূরা বাকারার ফজিলত:✳
✅এক. হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তোমরা তোমাদের ঘরকে কবরখানা বানাবে না। নিশ্চয় শয়তান ওই ঘর থেকে পলায়ন করে যে ঘরে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করা হয়। (-সহিহ মুসলিম)
ফজিলত পূর্ণ সূরার
✅দুই. হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন জিবরাঈল (আ.) হুজুর (সাঃ)-এর কাছে বসা ছিলেন, তখন তিনি ওপরের থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। ফলে তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন, এটা আসমানের একটি দরজা, যা আজকে খোলা হয়েছে। এর আগে কখনও খোলা হয়নি। এরপর সেখান থেকে একজন ফেরেশতা অবোতরণ করলেন, অতঃপর বললেন, এই ফেরেশতা আজকের আগে আর কখনও জমিনে অবতরণ করেনি। ফেরেশতা সালাম দিয়ে বললেন, দুটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনার আগে আর কোনো নবীকে দেয়া হয়নি। একটি হলো ফাতেহাতুল কিতাব আর অন্যটি সূরা বাকারার শেষ আয়াত। -(সহিহ মুসলিম)
✅তিন. হজরত আবু উমামা বাহেলি (রাঃ) থেকে বর্ণিত আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পড়ো। কেনোনা তা কেয়ামতের দিন তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশকারী হবে (বিশেষ করে) তোমরা এই দুটি নূরানী সূরা বাকারা ও আলে ইমরান পড়ো। কেননা এগুলো কেয়ামতে তার পাঠকারীকে এভাবে ছায়া দেবে এগুলো যেনো দুটি মেঘ খণ্ড অথবা শামিয়ানা বা পাখির ঝাঁক। এগুলো তার পাঠকদের পক্ষ থেকে (আজাব) প্রতিরোধ করবে। তোমরা সূরা বাকারা তেলাওয়াত করো, কেনোনা এটা অর্জন করা খুবই বরকতের বিষয় আর বর্জন করা অত্যন্ত আক্ষেপ ও অনুতাপের ব্যাপার। আর অলস লোকেরা এটা করতে পারে না। (-সহিহ মুসলিম)
সূরার ফজিলত
✅চার. হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত প্রতিটি জিনিসের একটি শীর্ষচূড়া থাকে। আর কোরআনের শীর্ষচূড়া হলো সূরা বাকারা। এতে এমন একটি আয়াত আছে, যা কোরআনের সব আয়াতের সরদার। তা হলো আয়াতুল কুরসি। (-জামে তিরমিজি)
✅পাঁচ. হজরত আবুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা সূরা বাকারাকে এমন দুই আয়াতের মাধ্যমে শেষ করেছেন, যা আমাকে তার আরশের নিচের ভাণ্ডার থেকে দান করা হয়েছে। সুতরাং নিজেরা তা শিখো এবং তোমাদের স্ত্রী-সন্তানদের শেখাও, কেনোনা এই আয়াতগুলো হলো দোয়া-দুরুদ ও কোরআন। (-মুসতাদরাকে হাকেম)
✅ছয়. হজরত নুমান ইবনে বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবীজি (সাঃ) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা জমিন ও আসমান সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে একটি কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন। তার থেকে দুটি আয়াত সূরা বাকারার মাধ্যমে শেষ করেছেন। যে ঘরে তিন দিন এটা পড়া হবে না, শয়তান সেই ঘরের নিকটবর্তী হয়ে যাবে। (-জামে তিরমিজি)
সূরার হাশরের ফজিলত
✴সূরা আল ইমরানঃ✴
📗ইমরান হলেন হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের নানা এবং হজরত মারইয়াম আলাইহিস সালামের পিতা। এ সুরার ৩৩ ও ৩৪নং আয়াতে তাঁর (ইমরানের) পরিবারের কথা ও বর্ণনা রয়েছে। একেই আলামত হিসেবে এ সুরার নাম আল-ইমরান হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এ সুরার আরেক নাম আজ-জাহ্রাহ্ বা আলোকচ্ছটা।’ (মুসলিম)
📗সুরাটি নাজিলের কারণঃ📗
📚হজরত ইবনু আবি হাতেম রাবি বর্ণনা করেন, হিজরি নবম বর্ষে নাজরানের এক খ্রিস্টান প্রতিনিধি দল মদিনায় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে আগমন করে হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের জিজ্ঞাসার জবাবে এ সুরার প্রথম থেকে ৮৩ আয়াত পর্যন্ত নাজিল হয়।
✳সুরার ফজিলত✳
✅১) হজরত কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, সুরা বাকারা এবং সুরা আল-ইমরান উভয়ে নিজো নিজো পাঠকদের সম্পর্কে বলবে, হে প্রতিপালক! এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’ (দুররে মানসুর)
✅২) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেয়ামতের দিন কুরআন ও যারা কুরআন অনুযায়ী আমল করতো তাদেরকে নিয়ে আসা হবে। (এর মধ্যে) সুরা বাকারা ও সুরা আল-ইমরান (তেলাওয়াতকারীরা) আগে আগে চলবে। মেঘের ছায়া বা পাখির মতো। এরা জোরালোভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে সুপারিশ করবে।’ (মুসলিম)
✅৩) প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সুরা বাকারা এবং সুরা আল ইমরান জুমআর রাতে তথা বৃহস্পতিবার দিবাত রাতে পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে সাত আসমান ও সাত জমিন পর্যন্ত সাওয়াব দান করবেন।’ (খোলাসাতুত তাফসির)
সূরার ফজিলত
✳৪) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কুরআন পাঠ করো। কারণ, তা পাঠকারীর জন্য কেয়ামতের দিন সুপারিশকারী হিসেবে আসবে। তোমরা দু’টি আলোকচ্ছটাময় ‘সুরা বাকারা ও সুরা আল-ইমরান পড়ো; কেনোনা এ দুটি সুরা কেয়ামতের দিন এমনভাবে আসবে যেনো দুটি মেঘখণ্ড অথবা দুটি ছায়া অথবা দু’বাক পাখির মতো। তারা এসে এ দু’সুরা পাঠকারীদের পক্ষ নেবে।’ (মুসলিম)
✅৫) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘কেয়ামতের দিন কুরআন আসবে যারা কুরআনের ওপর আমল করেছে তাদের পক্ষ হয়ে। তখন সুরা বাকারা ও সুরা আল-ইমরান থাকবে সবার আগে।’ (মুসলিম)
☝[আল্লাহ আমাদের সকলকেই আমল করার তাওফিক দান করুন] (আমীন আল্লাহুম্মা আমিন )🔚
গুরুত্বপূর্ণ সূরার ফজিলত
0 Comments