জীবিকা উপার্জনের বৈধ পন্থা।

 *জীবিকা উপার্জনের বৈধ পন্থা*

জীবিকা উপার্জনের বৈধ পন্থা


وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ


📗*আয়াতের তরজমা: “তোমরা অন্যায়ভাবে অবৈধ পন্থায় একে অপরের ধন-সম্পদ গ্রাস করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে বুঝে বাতিল পন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে শাসকদের হাতে তুলে দিও না।” (বাকারা-১৮৮)


📚*শানে নুযূল: প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে দুই ব্যক্তির মধ্যে একটি জমি নিয়ে বিবাদ হয়। পরিশেষে তারা এর মীমাংসার জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হয়। তাদের মধ্যে বাদী পক্ষের কোনো সাক্ষী ছিলো না। ফলে শরয়ী বিধান অনুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিবাদী পক্ষকে আল্লাহর নামে শপথ করতে বললেন (অর্থাৎ বিবাদী বলবে, আমি আল্লাহর নামে শপথ করছি যে, এই ভূমি আমার মালিকানা, বাদী পক্ষ এর মালিক নয়) তার শপথের পূর্বেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত শুনিয়ে দিলেন, যার মর্মার্থ হচ্ছে এই, “যারা আল্লাহর নামে মিথ্যা অঙ্গীকার করে শপথ করার মাধ্যমে পার্থিব সামান্য বস্তু ক্রয় করে, তাদের পরিণতি হলো আখিরাতে তাদের নেকীর কোনই অংশ নেই, আল্লাহ পাক তাদের সাথে কথাও বলবেন না এবং তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না। আর তাদেরকে গুনাহ থেকেও পবিত্র করবেন না। এবং তাদের জন্য অপেক্ষমাণ থাকবে, ভয়াবহ কঠিন আযাব”। (সূরা আলে ইমরান-৭৭)

জীবিকা উপার্জনের বৈধ পন্থা

🔥এই ভয়ংকর বিধান সম্বলিত আয়াত কর্ণগোচর হওয়াতেই সে বিবাদী মিথ্যা শপথ করা হতে বিরতো থাকলো। এরপর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাদীপক্ষকে জমি হস্তান্তর করলেন।


*তাফসীর*✳


📗উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহপাক বান্দাদেরকে অবৈধ ও বাতিল পন্থায় ধন-সম্পদ উপার্জন করে ভোগ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। যদি কেউ এ অলঙ্ঘনীয় বিধানকে অমান্য করে, তার পরিণতি কি হবে সেটারও বিবরণ দিয়েছেন। এ আয়াতের পূর্বে রমাযানের রোযার আলোচনা চলছিলো, উভয় আয়াতের মধ্যে সমঞ্জস্য হলোঃ

জীবিকা উপার্জনের বৈধ পন্থা

✅যদি কেউ এ অভিলাষ রাখে যে, তার বহু কষ্টের রোযা, ইফতার, সাহরী, তারাবীহ ইত্যাদি সবই মহান আল্লাহ পাকের দরবারে কবূল হোক, তাহলে তার জন্য জরুরী হলো হারাম ও অবৈধ পন্থায় মাল উপার্জন থেকে বিরত থাকা এবং রোযার মাসে হালাল মাল ভক্ষণ করা। কেননা, হারাম রিযিক ভক্ষণ করলে ইবাদতই কবূল হয় না।


 📗*আয়াতদ্বয়ের সম্পর্কঃ📗


✅বাস্তবিক পক্ষেই উভয় আয়াতের মধ্যে রয়েছে গভীর সম্পর্ক। একটি আরেকটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গের মতো। শুধু কি তাই? হারাম ও অবৈধ মাল থেকে বেঁচে থাকা মহান আল্লাহর অলঙ্ঘনীয় বিধানও বটে। উক্ত আয়াতটিতে আল্লাহ পাক অপর ভাই এর সম্পদকে তোমাদের মাল বলে উল্লেখ করেছেন, অথচ বাহ্যিক দৃষ্টিতে অপরের সম্পদ বলা যুক্তি সংগত ছিলো। মুফাসসিরগণ এর হিকমত উল্লেখ করেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হে ঈমানদারগণ! তোমরা অপরের সম্পদকে নিজের সম্পদের মতোই মনে করো। কেনোনা, তাতো তোমার অপর এক মুসলমান ভাইয়েরই। যেমনিভাবে তোমরা নিজের সম্পদকে অত্যাধিক গুরুত্বের সাথে হেফাযত করে থাকো, কোনোক্রমেই তা নষ্ট হতে দাও না, তোমার সম্পদ অন্য কেউ অবৈধভাবে উপভোগ করলে তোমার কষ্ট লাগে, তেমনিভাবে অপরের সম্পদকেও অত্যাধিক গুরুত্বের সাথে হেফাযত করবে, তাকে কোনোভাবেই তোমার সামনে বিনষ্ট হতে দিবে না। কেনোনা, সেও তো তোমার একজন মুসলমান ভাই। অন্য কেউ তার সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করলে তোমার মতো তারও তো কষ্ট লাগবে। সুতরাং অন্য ভাইয়ের সম্পদ তুমি অবৈধ পন্থায় ভোগ করতে যেয়ো না। তাছাড়া অপর ভাইয়ের ধন-সম্পদ ক্ষতি করা, আত্মসাৎ করা, নিজের ধন-সম্পদ নষ্ট করার মতোই। সুতরাং তুমি অন্যের সম্পদ ধোঁকা বা ফাঁকি দিয়ে আত্মসাত করলে একথা বিশ্বাস করে নাও যে, ভবিষ্যতে তোমার থেকেও অন্য কেউ ঐ পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশী টাকা অবৈধভাবে উসূল করতে পারে, বা অসুখ-বিসুখে ঐ টাকা অহেতুক খরচ হয়ে যাবেই। আর অশান্তি তো বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। আজ যদি তুমি মালে ভেজাল মিশ্রিত করে বিক্রি করো, তবে জেনে রাখো, অন্য একদিন তোমাকে দিয়ে আল্লাহ পাক ভেজাল বস্তু খরিদ করাবেন। তুমি ক্রেতাকে ঠকালে অন্য পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা তোমাকে ঠকাবেই। এটাই পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়ম। তুমি কাউকে ক্ষতি করো না, আল্লাহ পাক তোমার ক্ষতি করবেন না।🔚

জীবিকা উপার্জনের বৈধ পন্থা

Post a Comment

0 Comments