উত্তম চরিত্র গঠনের উপায়সমূহ।Ways to build good character.

 *উত্তম চরিত্র গঠনের উপায়সমূহ*⬇️

উত্তম চরিত্র গঠনের উপায়সমূহ


✅উত্তম চরিত্র হচ্ছে ঈমানের প্রমাণবাহী ও প্রতিফলন। চরিত্র ব্যতীত ঈমান প্রতিফলিত হয় না। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘ঈমানদার হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।’ –(সুনানে আবু দাউদ)⏬


☪ইসলামের ইবাদতসমূহ চরিত্রের সঙ্গে কঠোরভাবে সংযুক্ত। যে কোনো ইবাদত একটি উত্তম চরিত্রের প্রতিফলন ঘটায়। যেমন নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়;  নামাজ একজন মানুষকে যাবতীয় অশ্লীল ও অপছন্দনীয় কাজ থেকে রক্ষা করে আত্মশুদ্ধি ও আত্মার উন্নতি সাধনে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ হতে বিরতো রাখে।’ -(সূরা আল আনকাবুত: ৪৫,)⏬

🔰ইসলামে উত্তম চরিত্র গঠনের কিছু মৌলিক বিষয় পরিলক্ষিত হয়। যা উত্তম চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট উপায় বলে মনে করা হয়। সেগুলো হলো-

✅সত্যবাদিতা : আল্লাহতায়ালা ও তার রাসূল (সা:) আমাদেরকে সে সব ইসলামি চরিত্রের নির্দেশ দিয়েছেন, তার অন্যতম হচ্ছে সত্যবাদিতা। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। -(সূরা আত তওবা: ১১৯)

📚হজরত রাসূলুল্লাহ (সা:) হাদিসে ইরশাদ করেন, তোমরা সততা অবলম্বন করো। কেননা সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়।

উত্তম চরিত্র গঠনের উপায়সমূহ

✅আমানতদারিতা : উত্তম চরিত্রের একটি দিক হচ্ছে আমানতদারিতা। আল্লাহতায়ালা আমানতদারিতার বিষয়ে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, আমানতসমূহ তার হকদারদের নিকট পৌঁছে দিতে। -(সূরা আন নিসা: ৫৮)

📘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা:) এ গুণের জন্যেই তার সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আল-আমিন উপাধি লাভ করেছিলেন। বিনয় ও নম্রতা : উত্তম চরিত্রের আরেকটি দিক হচ্ছে বিনয় ও নম্রতা। একজন মুসলমান তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে বিনয়ী আচরণ করবে। সে ধনী হোক বা গরীব হোক। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালার নির্দেশ হলো- ‘তুমি তোমার পার্শ্বদেশ মুমিনদের জন্য অবনত করে দাও।’⏬

পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার : পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা উত্তম চরিত্রের অন্যতম। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আল্লাহর ইবাদত করো, তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করো না এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো।’ -(সূরা আন-নিসা: ৩৫)

📗এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মাতা-পিতার প্রতি আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য আয়াতে তিনি তাদের প্রতি দয়া ও বিনয়পূর্ণ আচরণ এবং তাদের জন্য দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা : আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ওয়াজিব। আর তা ছিন্ন করা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং এটা অভিশাপের কারণ। কোরআনে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা ক্ষমতা পাও, তাহলে কি তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? তারা তো ওই সব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহতায়ালা অভিশাপ করেছেন। তিনি তাদেরকে বধির করে দিয়েছেন এবং তাদের দৃষ্টি অন্ধ করে দিয়েছেন।’ -(সূরা মুহাম্মদ: ২২-২৩)⏬

📚হজরত রাসূলুল্লাহ (সা:) এক হাদিসে ইরশাদ করেছেন, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না। -(সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

উত্তম চরিত্র গঠনের উপায়সমূহ

অঙ্গীকারপূর্ণ : উন্নত চরিত্র গঠন করার ক্ষেত্রে এ দিকটি ভালোভাবে পালন করতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো, কেননা অঙ্গীকার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে।’ -(সূরা ইসরা: ৩৪)

❇তাছাড়া হাদিসে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করাকে মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যবহার : প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা উত্তম চরিত্রের অন্যতম দিক। প্রতিবেশী বলা হয় সেসব লোককে যারা আমাদের বাড়ির চারপাশে বসবাস করে। প্রতিবেশীদের প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, নিকটতম প্রতিবেশী ও দূরবর্তী প্রতিবেশীর প্রতিও।’ -(সূরা আন নিসা: ৩৬)

📚হজরত রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেন, ‘জিবরাঈল আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে ওসিয়ত করছিল, এমনকি আমি ধারণা করে নিলাম যে, প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকার বানিয়ে দেওয়া হবে।’ –(সহিহ বুখারি ও মুসলিম)⏬

ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা : ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা হলো উত্তম চরিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরমাদ হয়েছে, ‘আর যে ধৈর্য্যধারণ করলো এবং ক্ষমা করলো, নিশ্চয়ই এটা কাজের দৃঢ়তার অন্তর্ভুক্ত’। -(সূরা আশ শুরা: ৪৩)⏬

লজ্জা : এটা এমন একটি চরিত্র যা পরিপূর্ণতা ও মর্যাদাপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের দিকে আহ্বান করে। লজ্জা আল্লাহর পক্ষ হতে হয়ে থাকে। ফলে মুসলমান লজ্জা করে যে, আল্লাহ তাকে পাপাচারে লিপ্ত দেখবে। অনুরূপভাবে মানুষের থেকে এমনকি নিজের থেকেও সে লজ্জা করে। লজ্জা অন্তরে ঈমান থাকার প্রমাণ বহন করে। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘লজ্জা কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসে না।’ –(বুখারি ও মুসলিম)⏬

ন্যায়পরায়ণতা : ন্যায়পরায়ণতা আত্মার প্রশান্তি সৃষ্টি করে। সমাজে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন প্রকার অপরাধ বিমোচন করে। আল্লাহ্তায়ালা বলেন, ‘ইনসাফ করো, এটা তাক্বওয়ার অতীব নিকটবর্তী।’ –(সূরা মায়িদা:)⏬

উত্তম চরিত্র গঠনের উপায়সমূহ

দয়া ও করুণা : এ চরিত্রটি অনেক মানুষের অন্তর থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে তাদের অন্তর পাথরের মতো কিংবা তার চেয়ে অধিক শক্ত হয়ে গেছে। আর প্রকৃত মুমিন হচ্ছে দয়াময়, পরোপকারী ও গভীর অনুভূতিসম্পন্ন উজ্জ্বল অনুগ্রহের অধিকারী। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেন, মুমিনদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য, করুণা, অনুকম্পার উপমা হচ্ছে একটি শরীরের মতো। যখন তার একটি অঙ্গ অসুস্থ হয় তখন গোটা শরীর নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।⏬

চারিত্রিক পবিত্রতা: উত্তম চরিত্রের অন্যতম বিষয় হচ্ছে চারিত্রিক পবিত্রতা। আল্লাহতায়ালা এ বিষয়ে বলেন, ‘যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, তারা যেন চারিত্রিক পবিত্রতা গ্রহণ করে। যতক্ষণ না আল্লাহ তার অনুগ্রহে তাকে সম্পদশালী করেন।’ -(সূরা আন নূর: ৩৩)

📚হজরত রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা আমার জন্য ছয়টি বিষয়ের জিম্মাদার হও। তাহলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো। যখন তোমাদের কেউ কথা বলে, সে যেন মিথ্যা না বলে। যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন সে যেন তার খেয়ানত না করে। যখন প্রতিশ্রুতি দেয়, তা যেন ভঙ্গ না করে। তোমরা তোমাদের দৃষ্টি অবনত করো। তোমাদের হস্তদ্বয় সংযতো করো। তোমাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করো।’⏬

☝(আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমলের তৌফিক দান করেন) ...আমিন !🔚

উত্তম চরিত্র গঠনের উপায়সমূহ

Post a Comment

0 Comments