বান্দার হক নষ্ট করার শাস্তি।Punishment for destroying slave rights.

বান্দার হক নষ্ট করার শাস্তি

বান্দার হক নষ্ট করার শাস্তি


 *বান্দার হক*⬇️

বান্দার হক কে আমরা তুচ্ছ মনে করি, কিন্তু বান্দার হক নষ্ট করা আল্লাহর হক নষ্ট করা হইতেও ভয়াবহ🔽


* হক দুই প্রকারঃ-*

১ আল্লাহর প্রতি হক

২ বান্দার প্রতি হক


*১) আল্লাহর হকঃ-* 

আল্লাহর হক নষ্ট করলে আল্লাহ চাইলে শিরক ব্যতীত অন্য যে কোন গুনাহ ক্ষমা করতে পারেন বলে আমাদের বলেছেন!

নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে! এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন! যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়! (সূরা নিসা: ১১৬)

তবে এই আয়াতে উল্লেখিত গুনাহ হচ্ছে নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত যেগুলো আল্লাহর হক সেগুলো পালন না করার গুনাহ.!

বান্দার হক

*২) বান্দার হকঃ-*

বান্দার হক নষ্ট করার গুনাহ ক্ষমা করার এখতিয়ার আল্লাহ নিজ হাতে রাখেন নি! যেমন, আমি যদি একজনকে ধোঁকা দিয়ে ১ টি টাকাও নিয়ে নিই, কোন কথা বা গালির সাহায্যে মনে কষ্ট দেই, তবে একমাত্র সেই লোক (যার হক নষ্ট করলাম) সে বাদে আর কেউ ক্ষমা করতে পারবে না!

বান্দার হকের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেনঃ-

ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﻣَﻦْ ﺳَﻠِﻢَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﻟِﺴَﺎﻧِﻪِ ﻭَﻳَﺪِﻩِ، ﻭَﺍﻟْﻤُﻬَﺎﺟِﺮُ ﻣَﻦْ ﻫَﺠَﺮَ ﻣَﺎ ﻧَﻬَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ

প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার কথা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে! আর মুহাজির সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে পরিত্যাগ করে! (সহীহুল বুখারী: ৬৪৮৪)

অন্যত্র রাসূল ( সা:) বলেনঃ-

ﺑِﺤَﺴْﺐِ ﺍﻣْﺮِﺉٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﺮِّ ﺃَﻥْ ﻳَﺤْﻘِﺮَ ﺃَﺧَﺎﻩُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢَ ﻛُﻞُّ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﺩَﻣُﻪُ ﻭَﻣَﺎﻟُﻪُ ﻭَﻋِﺮْﺿُﻪُ

একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে! এক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম! (সহিহ মুসলিম: ৬৪৩৫)

✅মহান আল্লাহ, সুরা হুজুরাত-এর পরপর তিনটি আয়াতে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করছেন!

ঝগড়া হলে মীমাংসা করে নেওয়াঃ-

ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺇِﺧْﻮَﺓٌ ﻓَﺄَﺻْﻠِﺤُﻮﺍ ﺑَﻴْﻦَ ﺃَﺧَﻮَﻳْﻜُﻢْ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﺮْﺣَﻤُﻮﻥَ

নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, তাই তোমাদের ভাইদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও আর আল্লাহকে ভয় কর যেন তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও! (আল-হুজুরাত, ৪৯/১০)

✅হাদীসে পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়াকে সিয়াম, ছাদাক্বাহ, এমনকি সলাতের চাইতে উত্তম বলা হয়েছে! (সহীহ আবু দাঊদ: ৪৯৯২)

বান্দার হক

একবার রাসুলূল্লাহ (সাঃ) তাঁর পাশে উপবিষ্ট সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)কে বললেন-তোমরা কি জানো,গরীব কে ?

🔻সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন-আমাদের মধ্যে তো গরীব তাদেরকে বলা হয়,যাদের কাছে ধন-সম্পদ,টাকা-পয়সা না থাকে। তখন রাসুলূল্লাহ (সাঃ)বললেন- প্রকৃত পক্ষে আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে গরীব সে, যে কিয়ামতের দিন নামায,রোযা,যাকাত, সবকিছু নিয়ে উঠবে,কিন্তু তার এ কর্মগুলো থাকবে যে, সে দুনিয়াতে কারো সাথে মন্দ আচরন করেছে,কারো নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে,কাউকে আঘাত করেছে, কাউকে খুন করেছে ইত্যাদি, তাই এর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন তার কিছু নেকী একে দিবে, কিছু নেকী ওকে দিবে! এভাবে দিতে দিতে বান্দার হক আদায়ের পূর্বে যদি তার নেকী শেষ হয়ে যায়, তাহলে এই হকদারদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে! (সহীহ মুসলিম: ৬৪৭৩)

বান্দার হক

আল্লাহ আরো বলেন-

যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে! (সূরা আহযাব: ৫৮) 


অর্থাৎ কোন মানুষকে যে কোন ভাবে কষ্ট দিলে তা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না! ক্ষমা কেবল সেই ব্যক্তিই করতে পারে!

বান্দার হক নষ্ট করলে তা হতে ক্ষমা চাওয়ার উপায়ঃ-

১. যার হক নষ্ট করেছি তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে!

এখন, আমি যদি মন থেকে অপরাধ স্বীকার করলাম, এত দেরিতে যখন (যার হক নষ্ট করলাম) সে মারা গেছেন, সেই ক্ষেত্রে তার উপযুক্ত উত্তরাধিকার এর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে! (এই নজীর মক্কা বিজয়- এর পরে দেখা যায়)

২. এখন, আমি যদি মন থেকে অপরাধ স্বীকার করলাম, এত দেরিতে যখন (যার হক নষ্ট করলাম), সে মারা গেছেন বা পাওয়া যাচ্ছে না এবং তার উপযুক্ত কোন উত্তরাধিকার কেও পাওয়া যাচ্ছে না, তখন দেখতে হবে, অপরাধ এর ধরন কি? যদি, অপরাধটি আর্থিক ক্ষতি বিষয়ক হয়, তবে সমপরিমাণ অর্থ কোন সওয়াব এর প্রত্যাশা না করে কোন ভাল কাজে দিয়ে দিতে হবে! (যেমন, মসজিদ নির্মাণ) এবং আল্লাহ-র কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইতে হবে!

৩. এখন, আমি যদি মন থেকে অপরাধ স্বীকার করলাম, এত দেরিতে যখন (যার হক নষ্ট করলাম), সে মারা গেছেন বা পাওয়া যাচ্ছে না এবং তার উপযুক্ত কোন উত্তরাধিকার কেও পাওয়া যাচ্ছে না, তখন যদি, অপরাধটি ঐ লোককে অপমান করার মত কিছু হয়, যেমন ব্যাক্তিগত আক্রমণ (অহংকার, হিংসা, ঘৃণা) এর মত হয়, তখন কোন সওয়াব এর প্রত্যাশা না করে কাফফারা স্বরূপ


 ১০ জন মিসকিনকে এক বেলা খাইয়ে দিয়ে, আল্লাহর কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইতে হবে! 

মনে রাখতে হবে আল্লাহ মুখ দেখেন না মন দেখেন!


৪. উপরের কোন ভাবেই ক্ষমা না চাইলে , তাকে অবশ্যই কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে শেষ বিচারের সময় বিচারের মুখোমুখী হতেই হবে!

*যুল্‌ম হারাম* 

 কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও ‘আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কি বলতে পার, অভাবী লোক কে? তারা বললেন, আমাদের মাঝে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও ধন-সম্পদ নেই সে তো অভাবী লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সে প্রকৃত অভাবী লোক, যে ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন সলাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে ও আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক ‘আমাল থেকে দেয়া হবে, অমুককে নেক আমাল থেকে দেয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হাক তার নেক ‘আমাল থেকে পূরণ করা না যায় সে ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

  باب تَحْرِيمِ الظُّلْمِ ‏‏ حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَعَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، - وَهُوَ ابْنُ جَعْفَرٍ - عَنِ الْعَلاَءِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ أَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ وَلاَ مَتَاعَ ‏.‏ فَقَالَ ‏"‏ إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَاةٍ وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا وَأَكَلَ مَالَ هَذَا وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ ‏"‏ ‏.‏ 



সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)হাদিস নম্বরঃ ৬৪৭৩(ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৩)🔚

বান্দার হক

Post a Comment

0 Comments