*তাকওয়া হাসিলের হাতিয়ার*⬇
✅তাকওয়া অর্জনের সবচেয়ে মজবুত হাতিয়ার কী?
☑তাকওয়া অর্জনের সবচেয়ে বড়ো হাতিয়ার *ক. দুআ করা
*খ. মুত্তাকীদের নেগরানী ওয়ালা সোহবত অর্যন করা
*গ. হিম্মত করা
*ঘ. আল্লাহর মুহাববত অন্তরে পয়দা করা।
🔰এ চারটা বিষয়। আমরা ধোঁকায় থাকি, গাফলতে থাকি, এজন্য আমাদের কাছে সবই কঠিন মনে হয়।কিন্তু যদি চিন্তা করা হয় তাহলে দেখা যাবে, এ চারটার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হল, হিম্মত। আবার হিম্মতের চেয়ে কঠিন চেষ্টা করা। আপনার মধ্যে ন্যূনতম যে হিম্মত আছে সেটাকে কাজে লাগান এবং আরেকটু আগে বাড়ুন। ওটাকে কাজে লাগিয়ে আরেকটু আগে বাড়ার চেষ্টা করুন। তো হিম্মত অনেক শক্তিশালী নিআমত। শুধু একটু তাওয়াজ্জুহ দরকার।
তাকওয়া হাসিলের হাতিয়ার
❇বিভিন্ন দোষত্রুটি ত্যাগ করার ইচ্ছা মানুষ এই ভেবে বাদ দেয় যে, অভ্যাস হয়ে গেছে। অভ্যাস ত্যাগ করা খুব কঠিন। সব কঠিনের পেছনে কারণ হল, আমরা এই চার হাতিয়ার কাজে লাগাই না। শুধু একটাকে লাগাই। শুধু দুআ করি। শুধু দুআ এমন হাতিয়ার যা একা কখনো যথেষ্ট নয়। শুধু দুআর হাতিয়ার কাজে লাগানো মানে দুআর নাশোকরি করা।
🍁আসল দুআ তো হলো, দিল হাযির রেখে আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নেওয়া।
*أَمَّنْ يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ*
‘বলো তো কে নিরুপায় মানুষের ডাকে সাড়া দেন ‘যখন সে ডাকে’ [সূরা নামল ২৭ : ৬২]
তাকওয়া হাসিলের হাতিয়ার
✅ইযতিরারী হালত বা নিরুপায় অবস্থা যখন মানুষের পয়দা হবে, দিল হাযির রেখে যখন মানুষ দুআ করবে তখন যত বড় নাস্তিক হোক আল্লাহ সাথে সাথে দুআ কবুল করে নিবেন। আর এই ইযতিরারী হালত তখন পয়দা হবে, যখন আপনি অন্য সকল হাতিয়ারকে কাজে লাগাবেন। এসকল হাতিয়ার ব্যবহার করা ছাড়া ইযতিরারী হালত বা নিরুপায় ভাব পয়দা হওয়া কখনো সম্ভব না। সেজন্য শুধু এক হাতিয়ার ব্যবহার করা যেন কোনো হাতিয়ারই ব্যবহার না করা।
তাকওয়া হাসিলের হাতিয়ার
❇তো তাকওয়া অর্জনের চারটি হাতিয়ারের কথা বলছিলাম।
*এক. দুআ করা,
*দুই. মুত্তাকীদের নেগরানীওয়ালা সোহবত অর্যন করা,
*তিন. হিম্মত করা
*চার. আল্লাহর মুহাববত অন্তরে পয়দা করা।
🌎দুনিয়াতে স্বভাবগতভাবেই মানুষের কারো না কারো প্রতি টান থাকে, দুর্বলতা থাকে। সেটার উপর কেয়াস করে আপনি আল্লাহর মুহাববতটাকে বুঝতে পারেন। কারো প্রতি আপনার দুর্বলতা থাকলে আপনি তাঁর সাথে কেমন আচরণ করেন? অথচ সে মাখলুক। আপনার উপর তাঁর যদি কোনো ইহসান থাকেও তাহলে তা আল্লাহর তাওফীকে হয়েছে এবং ঘুরেফিরে তার সকল ইহসান আল্লাহর দিকেই যাবে। এরপরও তার প্রতি আপনার এত রেয়ায়েত, এত দুর্বলতা ! আল্লাহ্ রাববুল আ'লামীনের নিআমতে তো সেও ডুবে আছে, আপনিও ডুবে আছেন। তার প্রতি যদি আপনার এত মুহাববত হয় তাহলে আল্লাহর সাথে আপনার মুহাববত কেমন হবে? কেমন হওয়া উচিত?
কি ভাবে তাক ওয়া অর্জন করবেন
🌀স্বভাবগত ভাবেই মানুষের মধ্যে আল্লাহর মুহাববত সবচেয়ে বেশী থাকে। কিন্তু আল্লাহর নি'আমতের কথা স্মরণ না করার কারণে সেই মুহাববত চাপা পড়ে থাকে। তো ‘ইসলাহী মাজালিসে’ আল্লাহর মুহাববত বাড়ানোর কিছু উপায় বলা হয়েছে। যেমন, আল্লাহর নি'আমতের কথা স্মরণ করা। বেশী বেশী যিকির করা। কুরআন তিলাওয়াত করা। যাদের ভেতর আল্লাহর মুহাববত আছে তাদের কাছে বেশী বেশী যাওয়া। এরকম সাত আটটা উপায় সেখানে লেখা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে যেটা আমার কাছে সহজ লাগে সেটা দিয়ে আমি আল্লাহর মুহাববত বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারি।
☝আল্লাহর মুহাববত বাড়ানোর চেষ্টা করতে গেলেই মানুষ একটা ধাক্কা খায়। হয়তো কখনো গোনাহ হয়ে গেলে ধাক্কা যাবে। অথবা কখনো নেক আমল ছুটে গেলে ধাক্কা যাবে। এভাবে ধাক্কা খাবে একবার, দুইবার, তিনবার, চারবার। তারপর আসেত্ম আসেত্ম ঠিক হয়ে যাবে। এটা অনেক বড় একটা কৌশল। আল্লাহর মুহাববত বাড়াতে হবে এবং মুহাববতটাকে হাযির করতে হবে। অনুশীলন করতে করতে মুহাববতটাকে হাযির করতে হবে। আমার আল্লাহ নারায হবেন- এই ভেবে গোনাহের কাজ থেকে বিরতো থাকতে হবে। আমার মুরুববী যদি আমাকে এই কাজটা করতে দেখেন, তাহলে তিনি কী ভাবতেন? আমি কি এই কাজটা তার সামনে করতে পারতাম? অথচ মুরুববী আমার চোখের আড়ালে আর আমিও তার চোখের আড়ালে। তো একজন মুরুববীর বেলায় যখন এ কথা ভাবতে পারি তাহলে আমার আল্লাহ সম্পর্কে কি এ কথা ভাবতে পারি না? আমার আল্লাহ্ তো আমাকে সব সময় দেখেন। তিনি আমার চোখের আড়ালে হলেও আমি তো আল্লাহর চোখের আড়ালে না।
*فان لم تكن تراه فإنه يراك*
‘তুমি যদিও তাকে দেখো না, তিনি তো তোমাকে দেখেন’।
তাকওয়া হাসিলের হাতিয়ার
✅আরেক হাতিয়ার, হিম্মত। যতটুকু হিম্মত আল্লাহ্ আপনাকে দিয়েছেন তা কাজে লাগান এবং এভাবে আগে বাড়তে থাকা। হিম্মত এমন এক শক্তি যার মোকাবেলা করার মতো অন্য কোনো শক্তি দুনিয়াতে নেই। এই যে সিগারেটের অভ্যাস। কত মানুষ সিগারেটের অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছে। নিয়ত করে, খাবে না, আবার শুরু করে। আবার নিয়ত করে, খাবে না, আবার শুরু করে। এভাবে শেষবার যখন বলে- নাহ্, আর খাবো না। তখন আর খায় না। তো এই হিম্মতটা আল্লাহর কাছে অনেক দামী। হিম্মতের সাথে আল্লাহর রহমতের খুব বেশী সম্পর্ক। হিম্মত হলে আল্লাহর রহমত আসে। গোনাহ থেকে বাঁচার, তাকওয়া হাসিল করার যতো উপায় আছে এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর হলো হিম্মত করা। আল্লাহ্ তা'আলা দেখছেন, বান্দা আমার জন্যে চেষ্টা করছে।
*وَمَنْ أَرَادَ الْآَخِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُورًا*
এ আয়াতের ‘সা‘আ লাহা’-এর দ্বারা হিম্মত বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা এই হিম্মতের কদর করবেন- এই ওয়াদা আল্লাহ্ তা'আলা আগেই দিয়েছেন। বান্দা হিম্মতকে কাজে লাগালে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, আমি হিম্মতের শোকর করবো। এজন্যে দেখা যায়, বান্দা যখন তাঁর সর্বোচ্চ হিম্মতকে কাজে লাগায়, তখন সে সফল হবেই। হিম্মতের সাথে আল্লাহর ওয়াদা।
*وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ*
‘যে মুজাহাদা করবে আমি তাকে আমার পথে পরিচালিত করবো। [সূরা আনকাবূত ২৯ : ৬৯]
তাকওয়া হাসিলের হাতিয়ার
✅এখানে ‘রাস্তা দেখাবো’ দ্বারা তরজমা করার চেয়ে ‘পরিচালিত করবো’ দ্বারা তরজমা করা সুন্দর। কারণ রাস্তা তো আল্লাহ্ তা'আলা কুরআন সুন্নাহর মাধ্যমে দেখিয়েছেন।
❇এখানে অর্থ হলো, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর পথে পরিচালিত করবেন। আমাদের শাইখুল হাদীস সাহেব এই তরজমা করতেন। এখানে বলা হয়েছে মোজাহাদা করার কথা। আর আসল মোজাহাদা হলো হিম্মত ব্যবহার করা। বান্দা তার হিম্মত ব্যবহার করলে আল্লাহর নুসরত আসবেই।
✅তো হিম্মত এটা কোনো ওয়াজের বিষয় না। এটা কাজ করার বিষয়। সুতরাং হিম্মত করো। গোনাহ থেকে বেঁচে থাকো।
☝আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে তাকওয়া অর্যন করার খুব তাওফীক দান করেন। (আমীন..!)🔚
তাকওয়া হাসিলের হাতিয়ার
0 Comments