রাসূলুল্লাহ (সঃ) কিভাবে নামাজ পড়েছেন ?

 



 

💟 রাসূলুল্লাহ (সঃ) যেভাবে সালাত আদায় করতেন,


☑রাসূল(সঃ)বলেছেন, তোমরা সেভাবেই সালাত আদায় করো যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখছো। (বুখারী-৬৩১)

☑আবার রাসূল(সঃ) এর নিয়ম ব্যতীত মনগড়া পদ্ধতিতে নামাজ পড়লে তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে এই মর্মে কোন দলিল পাওয়া যায় না। অথচ মহান আল্লাহ বলেন, "আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য (পদ্ধতি বা স্বীকৃতি) ব্যতীত আমল করে তোমরা তোমাদের আমলসমুহ বিনষ্ট করো না।" (সূরা মুহাম্মাদ-৩৩)

☑সুতরাং আমাদেরকে রাসূল(সঃ)এর পদ্ধতিতেই সালাত আদায় করতে হবে।


👉রাসূল(সঃ) যেভাবে সালাত আদায় করেছেন তার প্রত্যেকটি বিষয় দলিলসহ ধারাবাহিক ভাবে দেওয়া হলোঃ-


👉সংক্ষেপে তাকবীর থেকে সালাম পর্যন্তঃ


১. সালাতের শুরুতে মুখে নিয়ত(নাওয়াইতুয়ান...) বলা বিদআত। অন্তরে সংকল্পের মাধ্যমে নিয়ত করতে হবে (বুখারী-১; মিশকাত-১)

***জায়নামাজে দাঁড়িয়ে "ইন্নি ওয়াজ্জাহতু...পড়া বিদআত। (তবে সানা হিসেবে নিয়ত বাধাঁর পর এই দোআ পড়া যাবে)


২.ক্বিবলামুখী হয়ে "আল্লাহু আকবার'' বলে দুই হাত কাঁধ বা কানের লতি বরাবর উঠাতে হবে। (কিন্তু কান স্পর্শ করতে হবে না) (বুখারী ৭৩৫; মিশকাত ৭৯০,৭৯৩)


৩.বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে বুকের উপর বাঁধতে হবে। (আবু দাউদ ৭৫৯; বুখারী ৭৪০)

***নাভীর নিচে হাত বাঁধার হাদীস যঈফ।


৪.জামাতের সাথে সালাত আদায় করলে কাতারের মাঝে পরস্পরের পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে। (দুইজন মুছল্লীর মাঝে ফাঁক রাখা সুন্নাত বিরুধী) (বুখারী ৭২৫; আবু দাউদ ৬৬২; মিশকাত ১১০২)


৫.সিজদার স্থান বা তার কাছাকাছি সীমার মধ্যে দৃষ্টি রাখতে হবে। (হাকেম ১০৭৬১)


৬.ছানা পাঠ করতে হবে "আল্লাহুম্মা বাইদ বায়নী...." (বুখারী ৭৪৪) অথবা "সুবাহানাকা...." (মুসলিম) অথবা "ইন্নি ওয়াজ্জাহতু...." (মিশকাত ৮১২)


৭..ক))আঊযুবিল্লাহ... -বিসমিল্লাহ... সহ সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। (বুখারী ৭৪৩, ৭৫৬; আবু দাউদ ৭৭৫;, ইবনে মাজাহ ৮৪৩; মুসলিম ৩৯৮, ৯০৪; মিশকাত ৮২৩, ৮২৪)

খ)).পরের রাক'আত গুলোতে শুধু বিসমিল্লাহ... পড়ে পাঠ করতে হবে।

গ))ইমাম ও মুছল্লী বা একাকী সালাতে ক্ষেত্রে প্রত্যেককেই সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।

ঘ))প্রথম দুই রাক'আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা বা কিছু আয়াত পাঠ করতে হবে। পরের এক বা দুই রাক'আতে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।


৮. সূরা ফাতিহা শেষে আমিন বলতে হবে। ইমামের পিছনে ও একাকী জেহরী সালাতে সূরা ফাতিহা শেষে ইমাম ও মুক্তাদী উভয়কেই উচ্চস্বরে আমিন বলতে হবে। (বুখারী ৭৮০; মুসলিম ৪১০; আবু দাউদ ৯৩২, ৯৩৩; তিরমিযী ২৪৮; ইবনে মাজাহ ৮৫৬)


৯.ক্বিরা'আত শেষে "আল্লাহু আকবার" বলে দুই হাত কাঁধ বা কান পর্যন্ত উঠিয়ে (রাফউল ইয়াদাঈন করে) রুকুতে যেতে হবে। (বুখারী ৭৩৫ থেকে ৭৩৯; মুসলিম ৩৯০, ৩৯১; 


১০.দুই হাত দ্বারা দুই হাঁটু শক্ত করে ধরে ভর দিয়ে পিঠ ও মাথা সোজা রাখতে হবে। হাঁটুসহ দুই পা ও সোজা রাখতে হবে। হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁকা রাখতে হবে। (বুখারী ৮২৮; মুসলিম ৪৯৮; মিশকাত ৭৯১)


১১.অত:পর কমপক্ষে ৩ বার সুবহানা রব্বিয়াল আযীম পড়তে হবে। (বুখারী ৭৯৪,৮১৭; মিশকাত ৮৮১)


১২.রুকু থেকে উঠার সময় "সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলতে হবে। (বুখারী ৭৯৫)


১৩.অতঃপর রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে প্রশান্তির সাথে দাঁড়াবে এবং কাঁধ বা কান বরাবর দুই হাত উঠিয়ে "রফউল ইয়াদাঈন" করতে হবে। (বুখারী ৭৩৫ থেকে ৭৩৯; মুসলিম ৩৯০,৩৯১)


১৪.তারপর বলতে হবে "রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ" (বুখারী ৭৩৩) অথবা "রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ হামদান কাছীরান ত্বাইয়িবান মুবারাকান ফীহি (বুখারী ৭৯৯; মিশকাত ৮৭৭)


১৫.রুকু থেকে উঠে পুনরায় বুকে হাত বাঁধতে হবে এবং এমনভাবে দাঁড়াতে যেন মেরুদন্ডে ও হাড় সমুহ পুর্বের ন্যয় স্ব-স্ব স্থানে ফিরে আসে। (বুখারী ৮২৮; মিশকাত ৯৯২)


১৬.রাসূল (সা:) এর রুকু, সিজদা, রুকু থেকে উঠে দাড়ানো ও দুই সিজদাহের মধ্যবর্তীতে বসার সময় প্রায় সমান হত। (বুখারী ৮০১)


১৭.তারপর আল্লাহু আকবার বলে প্রথমে দুই হাত ও পরে দুই হাঁটু মাটিতে রেখে সিজদায় যেতে হবে। (মিশকাত ৮৯৯; আবু দাউদ ৮৪০; নাসাঈ ১০৯১;)


১৮.হাত দুইটি ক্বিবলামুখী করে মাথার দুই পাশে কাঁধ বরাবর রেখে হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখতে হবে। (আবু দাউদ ৭৩৪; তিরমিযি ২৭০; মিশকাত ৮০১; মুস্তাদরাক হাকিম ৮১৪; বুলগুল মারাম ২৯৭)


১৯.কনুই উঁচু রাখবে ও বগল ফাঁকা রাখতে হবে। (বুখারী ৮০৭,৩৫৬৪; মুসলিম ৪৯৫; মিশকাত ৮৮৮)


২০.সিজদা লম্বা হবে ও পিঠ সোজা থাকবে। যেন নীচ দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে। (মুসলিম ৪৯৬; আবু দাউদ ৮৯৮; মিশকাত ৮৯০)


২১.দুই পা খাড়া করে এক সাথে মিলিয়ে রাখতে হবে। (মুসলিম ৪৮৩; মিশকাত ৮৯৩) এ সময় আঙ্গুলগুলো ক্বিবলামুখী করে রাখতে হবে। (বুখারী ৮২৮; মিশকাত ৭৯২)


২২.কমপক্ষে ৩ বার "সুবহানা রব্বিয়াল আলা" বলতে হবে। (বুখারী ৭৯৪; ইবনু মাজাহ ৮৮৮; মিশকাত ৮৭১)


২৩.সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসে ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখতে হবে। এ সময় প্রশান্তির সাথে বসতে হবে। (বুখারী ৮২৮; মিশকাত ৭৯২)


২৪. দুই সিজদাহের মাঝখানে বলতে হবে "রব্বিগফিরলী, রব্বিগফিরলী (মিশকাত ৯০১) অথবা "আল্লাহুম্মা গফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াজবুরনী ওয়াদিনী ওয়াআফিনী ওয়ারযুক্বনী।" (মিশকাত ৯০০; তিরমিযী ২৮৪; আবু দাউদ ৮৫০)


২৫.তারপর "আল্লাহু আকবার" বলে ২য় সিজদায় যেতে ও দু'আ পড়তে হবে। ১ম ও ৩য় রাক'আত শেষে ২য় ও ৪র্থ রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর সময় সিজদা থেকে উঠে শান্তভাবে বসতে হবে তারপর মাটিতে দুই হাত রেখে ভর দিয়ে দাঁড়াতে হবে। (বুখারী ৮২৩, ৮২৪; মিশকাত ৭৯৬; সুনানুল কুবরা ২৯১৯)


২৬.রাসূল (সা:) ২য় সিজদাহ হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে না বসে দাড়াতেন না। (বুখারী ৮০২)


২৭.২য় রাক'আত শেষ করার পর বৈঠকে বসতে হবে। এ সময় বাম পায়ের পাতার উপর বসবে এবং ডান পায়ের পাতা খাঁড়া করে রেখে আঙ্গুলগুলো কিবলামূখী রাখতে হবে। ১ম বৈঠক হলে কেবল ''আত্তাহিয়াতু....." পড়তে হবে। (বুখারী ৮২৮; মুসলিম ৪৯৮; মিশকাত ৭৯১,৭৯২)


২৮.১ম বৈঠক শেষে ৩য় রাকাতের জন্য দুই হাতের উপর ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁধ বা কান বরাবর দুই হাত উঠিয়ে "রাফউল ইয়াদাঈন " করতে হবে। (বুখারী ৭৩৫ থেকে ৭৩৯ ও ৮২৩; মিশকাত ৭৯৬)


২৯.শেষ বৈঠক হলে 'আত্তাহিয়াতু, দরুদ, দু'আয়ে মাছূরা (হাদীসে বর্নিত এক বা যে কোন একাধিক দু'আ) পড়তে হবে। (বুখারী ৮৩৫; মুসলিম ৫৮৮; মিশকাত ৯৪০)


৩০.শেষ অর্থাৎ যে কোন সলাতের ছালাম ফিরানোর বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে নিতম্বের উপরে বসতে হবে এবং ডান পা খাড়া রাখে আঙ্গুলগুলো ক্বিবলামুখী রাখতে হবে। পায়ের আঙ্গুলগুলো সাধারন ভাবে খোলা থাকবে। (বুখারী ৮২৮; মিশকাত ৭৯২,৮০১; আবু দাউদ ৭৩০)।


৩১.বৈঠকে ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল মধ্যমা আঙ্গুলের পিঠে রেখে মুষ্টিবদ্ধ করে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত ক্বিবলসমূখী ইশারা করে রাখতে হবে এবং মৃদ উপর নিচ নাড়াতে হবে। দুই তাশাহুদেই এমনই করতে হবে। (মুসলিম ৫৭৯,৫৮০ ও ১১৮৪, মিশকাত ৯০৬,৯০৮,৯১১,৯১৩,৯১৭; সুনানুল কুবরা ২৯০৩)

***‘আশহাদু আল্লাহ ইলাহা’ বলার সঙ্গে সঙ্গে শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে আবার ইল্লাল্লাহু বলে টুপ করে নামিয়ে ফেলার কোন দলিল নেই। (তাহক্বীক মিশকাত ৯০৬ এর টিকা ১/২৮৫ পৃ:)


৩২.এ সময় শাহাদাত আঙ্গুলের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। (নাসাঈ ১১৬০,১২৭৫)


৩৩.তারপর "আসসালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ" বলে ডানে ও বামে সালাম ফিরাতে হবে। (বুখারী ৮৩৪; মিশকাত ৯৪২)


৩৪.সালাম ফিরিয়ে প্রথমে স্বরবে ১বার "আল্লাহু আকবার" ও ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলতে হবে, অতঃপর বলতে হবে 'আল্লাহুম্মা আতনাস সালাম ওয়া মিকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া যাল জালালী ওয়াল ইকরাম' এবং আয়াতুল কুরসী পড়তে হবে। হাদিসে বর্ণিত একাধিক মাসনূন দু'আ সমুহ পাঠ করতে হবে। (বুখারী ৮৪২,৮৪৪; মুসলিম ৫৮৩,৫৯১,৫৯৩; মিশকাত ৯৫৯,৯৬১,৯৬২; আবু দাউদ ১৫২২)

***ফরয নামায শেষে হাত তুলে বা সম্মিলিত ভাবে মুনাজাত করার কোন দলিল নেই।


বি:দ্র: নারী ও পুরুষের সালাত আদায়ের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন। পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানীত নয়। তবে নারীগণ সকল সূরা কিরাত, তাকবীর, আমিন সহ সকল কিছু উচ্চারণ করবে মনে মনে, উচ্চস্বরে নয় এবং পর্দা করবে তাদের উপর যতটুকু ফরয করা হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments