কাজের মানুষকে দিনে সত্তরবার ক্ষমা করো। Servant

*কাজের মানুষকে দিনে সত্তরবার ক্ষমা করো*

কাজের মানুষকে দিনে সত্তরবার ক্ষমা করো


✅একবার এক সাহাবী এসে নবীজীকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসূল! আমি খাদেমকে (কাজের লোক বা গোলামকে) কতোবার ক্ষমা করবো? নবীজী চুপ থাকলেন। সাহাবী আবার জিজ্ঞাসা করলেন। এবার নবীজী বললেন, প্রতিদিন সত্তরবার। [জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৪৯]


💐আমাদের প্রায় প্রত্যেকের বাসায় কাজের মানুষ আছে। যারা আমাদের জীবনের সাথে ওঁতপ্রোতভাবে জড়িতো। আমরা যাদের সেবা গ্রহণ করে চলেছি প্রতিনিয়তো। যারা আমাদের সংসারে সাহায্য করছে, আমাদের সন্তানদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। যারা নিজেদের আরাম হারাম করে আমাদের আরামের খেয়াল রাখছে। রাত নেই দিন নেই যারা আমাদের ফরমায়েশ খেটে চলেছে। সেই সকালে ঘুম থেকে উঠে শুরু, আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত চলবে হুকুম তামিল করা। নিরলস সেবা দিয়ে যেতে হবে। ওদের যেনো কোনো ক্লান্তি নেই, বিশ্রামের কোনো প্রয়োজন নেই। হুকুম করা মাত্রই তামিল করতে বাধ্য। একগ্লাস পানি আনা থেকে শুরু করে যে কাজটা নিজে স্বচ্ছন্দে করতে পারি সেটাও ওকে দিয়েই করাতে হবে। আর যেটা ওর কাজ সেক্ষেত্রে তো কথাই নেই। এতোকিছুর পরও যদি পান থেকে চুন খসে তাহলে আর রক্ষে নেই।


✅একটু ভেবে দেখেছি, ওর স্থানে যদি আমি হতাম। আমার কী অবস্থা হতো। সুতরাং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। সবচেয়ে বড়ো শুকরিয়া হলো, ওদের সাথে ভালো আচারণ করা। ওদেরকে কম খাটানো; প্রয়োজন ছাড়া খামোখা না খাটানো। ওদের সুবিধা-অসুবিধা অনুধাবন করে ওদের প্রতি সদয় হওয়া। ভুল হলে ক্ষমার আচরণ করা।


🚫ভুল তো মানুষেরই হয়। একজন কাজের লোকেরও ভুল হয়। সেক্ষেত্রে তাদের সাথে কেমন আচারণ হবে উপরের হাদীস থেকে তা আমরা জানতে পারলাম। সত্তরবার পর্যন্ত ক্ষমা করতে হবে। এখানো সত্তর মানে সত্তর সংখ্যা উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্য হলো, যতোবার ক্ষমা করার প্রয়োজন দেখা দিবে ততোবার ক্ষমা করবে।


❇কার ভুল হয় না? ভুল হবেই। সুতরাং তাদের ভুল হয়ে গেলে রাগ দমন করা চাই। রাগ দমন করা তো মুমিনের গুণ। আল্লাহ্ তা'আলা মুমিন-মুত্তাকীর গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন-⤵️


*তরজমা* ‘...যারা ক্রোধ দমন করে, ক্ষমা করে দেয়।’ সুতরাং শুধু ক্রোধ দমন করাই নয় বরং ক্ষমা করে দিতে হবে। আর গায়ে হাত তোলার তো প্রশ্নই ওঠে না। অসহায়ের গায়ে হাত তোলা কতো বড়ো অন্যায় তা আপনার বিবেককে প্রশ্ন করুন।


🔰তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করা উচিত। এমন কোনো কথা বলা উচিত নয়, যার দ্বারা সে মনে কষ্ট পায়। এমন কোনো আচরণ করা উচিত নয়, যার কারণে সে হীনম্মন্যতায় ভোগে। যেমন তাদেরকে সোফায় বসতে না দেওয়া। সোফায় বসতে দিন, কীভাবে বসতে হয় তাও শিখিয়ে দিন।


💞অনেক মানুষকে দেখা যায় রিক্সায় উঠেছে তো কাজের মানুষকে রিক্সার মধ্যে পায়ের কাছে বসিয়েছে। আপনি পারতেন আপনার সন্তানকে এভাবে বসাতে। বা কেউ আপনার সন্তানকে এভাবে বসালে আপনার কেমন লাগতো। যদি বলেন ওরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে না, তাই রুচি হয় না। ওদের পরিচ্ছন্ন থাকা না থাকা তো আপনার উপর নির্ভর করে। কারণ, আপনি ওদের দায়িত্বশীল। আপনি চাইলেই ওদেরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারেন। কিছু এমন পরিবারও মাশাআল্লাহ্ আছে, যারা কাজের মানুষকে এমনভাবে রাখেন যে, বোঝার উপায় নেই এ কাজের মানুষ, না এ বাড়ির সন্তান। আপনি অতোটা না পারেন অন্ততো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখুন।


💒কাজের মানুষের কথা তো দূরে থাক। টাকায় কেনা গোলাম-বাদির ব্যাপারে রাসূল *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* কী বলেছেন শুনুন--⤵


*...جَعَلَهُمُ اللَّهُ تَحْتَ أَيْدِيكُمْ، فَمَنْ كَانَ أَخُوهُ تَحْتَ يَدِهِ، فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأْكُلُ، وَلْيُلْبِسْهُ مِمَّا يَلْبَسُ، وَلاَ تُكَلِّفُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ، فَإِنْ كَلَّفْتُمُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ فَأَعِينُوهُمْ.*


*অর্থ:-* ...আল্লাহ্ তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। তোমাদের কারো অধীনে যদি কেউ থাকে তাহলে সে যেনো নিজে যা খায় তাকেও তা থেকে খাওয়ায়। নিজে যা পরিধান করে তাকেও তা থেকে পরিধান করায়। এবং তোমরা তাদের উপর সাধ্যের বেশি কাজ চাপিয়ে দিও না। যদি দাও তাহলে নিজেও সে কাজে তাকে সহযোগিতা করো। [সহীহ বুখারী, হাদীস ২৫৪৫]


🌷তাঁরা আপনার জন্য ভালো কোনো খাবার প্রস্তুত করে আনলে এমন যেনো না হয় যে, সে কষ্ট করে খাবার প্রস্তুত করলো আর ঘ্রাণ নেওয়া ও দেখা ছাড়া তার ভাগ্যে কিছুই জুটল না। নবীজী *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* বলেছেন--⤵


*إِذَا أَتَى أَحَدَكُمْ خَادِمُهُ بِطَعَامِهِ، فَإِنْ لَمْ يُجْلِسْهُ مَعَهُ، فَليُنَاوِلْهُ لُقْمَةً أَوْ لُقْمَتَيْنِ أَوْ أُكْلَةً أَوْ أُكْلَتَيْنِ، فَإِنَّهُ وَلِيَ عِلاَجَهُ.*


*অর্থ:-* যখন খাদেম খাবার প্রস্তুত করে তোমার সামনে পেশ করে, তখন (পারলে তাকে তোমার সাথে বসিয়ে খাওয়াও) তাকে যদি তোমার সাথে বসিয়ে খাওয়াতে না পারো অন্ততো তার হাতে এক দুই লোকমা তুলে দাও। কারণ এ খাবার প্রস্তুত করতে গিয়ে (আগুনের তাপ ও) সকল কষ্ট তো সেই সহ্য করেছে। [সহীহ বুখারী, হাদীস ২৫৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৬৩]


💒আর বাড়ির শিশুরাও ওদের সাথে অনেক সময় অন্যায় আচরণ করে। তাদেরকেও শেখানো দরকার কাজের মানুষের সাথে কেমন আচরণ করতে হয়। অনেক সময় আমাদের অসতর্কতায় আমাদের কাছ থেকেই বাড়ির শিশুরা কাজের মানুষের সাথে অন্যায় আচরণ করা শেখে। আমরা যদি বিষয়টি শুধরে না দিই তাহলে আমাদের সন্তানেরা এখান থেকে যুলুম করা শিখবে, যার দায়ভার আমাদের ওপরই বর্তাবে।


❇যাই হোক মোদ্দাকথা হলো, কাজের মানুষের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে। ভুল হলে ক্ষমা করতে হবে।


☝আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে পরিপূর্ণ দ্বীন বুঝার এবং আমল করার তাওফিক দান করেন। (আমীন..!)🔚


Post a Comment

0 Comments