*ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার*⬇
🌙শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ধর্ম ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকারের কথা বিধৃত হয়েছে। শ্রমিকদের প্রতি সুবিচারের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম শ্রমের প্রতি যেমন মানুষকে উৎসাহিত করেছে,
মহান আল্লাহ বলছেন;
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللهِ وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿١٠
তারপর যখন নামায শেষ হয়ে যায় তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহ্র করুণাভান্ডার থেকে অণ্বেষণ করো, আর আল্লাহ্কে প্রচুরভাবে স্মরণ করো, যাতে তোমাদের সফলতা প্রদান করা হয়। (সূরা জুমু‘আহ ১০) এই আয়াত হতে বুঝা যায় যে, ইসলামে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ নামায শেষ করেই কাজের প্রতি ঝাপিয়ে পড়তে বলা হয়েছে।⏬
ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার
👨👨👦👦তেমনি শ্রমিকের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পূর্ণ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষকে অত্যন্ত সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতেন। কারণ যারা মানুষের সুখের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজেদেরকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয়, তারাতো মহান আল্লাহর কাছেও মর্যাদার অধিকারী। শ্রমের মর্যাদা বুঝাতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন,
مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَّأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ وَإِنَّ نَبِىَّ اللهِ دَاؤُوْدَ ॥ كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ-
‘কারো জন্য স্বহস্তের উপার্জন অপেক্ষা উত্তম আহার্য আর নেই। আর আল্লাহর নবী দাঊদ (আঃ) স্বহস্তে জীবিকা নির্বাহ করতেন’। (বুখারী, মিশকাত হা/২৭৫৯)
শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম বদ্ধপরিকর। আর একজন শ্রমিকের সবচেয়ে বড় অধিকার বা দাবী হলো, তার শ্রমের যথোপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভ করা। এজন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন,
أَعْطُوا الْأَجِيْرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَّجِفَّ عَرَقُه-
‘তোমরা শ্রমিককে তার শরীরের ঘাম শুকানোর পূর্বেই পারিশ্রমিক দিয়ে দাও’। (ইবনু মাজাহ,মিশকাত হা/২৯৮৭)
এই হাদীস থেকে যা জানা গেলো:⏬
✅১। শ্রমিকের শ্রম আটকে রাখা বৈধ নয়, কেননা এতে শ্রমিক নিজেসহ পরিবারের লোকদের নিয়ে সমস্যায় ভুগতে হয়, তারা খানা-পিনা, পোশাক পরিচ্ছদ বাচ্চাদের লেখা-পড়া চিকিৎসা ইত্যাদি এই শ্রমের উপর নির্ভর করে থাকে। তেমনিভাবে অর্পিত কাজের প্রতি তার আগ্রহ থাকে না। সে ভাবতে থাকে যে, কাজ করে লাভ কি আমি তো পারিশ্রমিক পাবো না।⏬
✅২। যে ব্যক্তি উত্তম বা সুন্দরভাবে কাজ করে, তাকে এর উত্তম প্রতিদান দেওয়া দুনিয়ার নিয়ম। আর কিয়ামতের দিনও আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি প্রতিদান পাবে।⏬
✅৩। শ্রমিকের সাথে নম্র বা কোমল আচরণ করুন, তাদেরকে কষ্ট দিবেন না। এবং সাধ্যের বাইরে কাজ দিবেন না, কেননা সাধ্যের বাইরে বহন করতে স্বয়ং আল্লাহ নিষেধ করেছেন। لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার
✅৪। ইসলাম শ্রমিকদেরকে ন্যায্য অধিকার দিয়েছে, সুতরাং মালিকের উচিৎ নয় তার অধিকারকে খর্ব করা। বরং তার উচিৎ শ্রমিকের শ্রম যথা সময় দিয়ে দেওয়া। এবং বিশ্রামের ও ইবাদতের সুযোগ দেওয়া। এবং পরিবারের খোঁজ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া।⏬
✅৫। প্রত্যেক ব্যক্তির জানা উচিত যে, কিয়ামতের দিন ছোট বড় সব বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে।⏬
✅৬। শ্রম, শ্রমিকের অধিকার। মালিকের পক্ষ থেকে কোন করূণা নয়।⏬
✅৭। মালিকের উচিৎ সকল শ্রমিকদের এক নজরে দেখা। শ্রমিকগণ প্রজার ন্যায়, তারা মালিকদের নিকট আমানত। সুতরাং কিয়ামতের দিন, তাদেরকে এই বিষয় প্রশ্ন করা হবে।⏬
✅৮। যে কোন ধরণে বৈধ কাজ উত্তম, মানুষের নিকট ভিক্ষা করা হতে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন:
لو أن أحدكم أخذ حَبْلَه فأتى بحطَبٍ فباعه فأغنى به نفسه، خير له من أن يسأل الناس أعطوه أو منعوه
তোমাদের মধ্য হতে কেউ লাকড়ির বোঝা বহন করে বিক্রি করা উত্তম, কারো নিকট হাত পাতার চেয়ে, হয়তো সে দিতেও পারে আবার না করতে পারে। (বুখারী ও মুসলিম)⏬
✅৯। কর্মের ভিতর তিনটি রোকন রয়েছে: শ্রমিক, শ্রম, মালিক। ইসলামে কাজের বা শ্রমের মর্যাদা তো সবার নিকট স্পষ্ট। তখনই সেটি মর্যাদা পায়, যখন তা বৈধ হবে। যে ব্যক্তি হারাম ভাবে উপার্জন করে, সে নিজেকে শাস্তির মুখে ঠেলে দিলো। এর সাজা তাকে দুনিয়াতেই অনেক সময় ভোগ করতে হয়।⏬
✅১০। কাজ আরম্ভ করার পূর্বেই কন্ট্রাক্ট করতে হবে, বেতন কতো হবে? ডিউটি কতো ঘণ্টা করতে হবে? এটাই নবীদের আদর্শ, এবং ইনসাফের নীতি। যেমন মূসা (আ.) যখন শোয়াইব (আ.)-এর মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন, তখন তিনি বলেছিলেন,
قَالَ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُنْكِحَكَ إِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ عَلَى أَنْ تَأْجُرَنِي ثَمَانِيَ حِجَجٍ ﴾ القصص
যে আমি মহরানা বাবদ আট বছর কাজ করবো।
ইসলামে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: ইসলামে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক হবে পিতা-সন্তানের ন্যায়। নিজের পরম আত্মীয়ের মতোই শ্রমিকের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ করা, পরিবারের সদস্যদের মতোই তাদের আপ্যায়ন করা, শ্রমিকের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার প্রতিটি মুহূর্তের প্রতি মালিকের খেয়াল রাখা এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করা মালিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শ্রমিককে তার প্রাপ্য পূর্ণভাবে যথাসময়ে প্রদান করাও মালিকের একটি প্রধান দায়িত্ব। অনেক সময় শ্রমিকদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মালিকগণ উপযুক্ত মজুরী না দিয়ে যৎ সামান্য মজুরী দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করে। এ ধরনের মালিকদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, ক্বিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে। তাদের মধ্যে একজন হল
وَ رَجُلٌ أسْتَأْجَرَ أَجِيْرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِهِ أَجْرَهُ
‘যে শ্রমিকের নিকট থেকে পূর্ণ শ্রম গ্রহণ করে অথচ তার পূর্ণ মজুরী প্রদান করে না’। (বুখারী, মিশকাত হা/২৯৮৪)
অপরদিকে একজন শ্রমিকের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- চুক্তি মোতাবেক মালিকের প্রদত্ত কাজ অত্যন্ত নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে সম্পাদন করা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
إِنَّ اللهَ تَعَالَى يُحِبُّ مِنَ الْعَامِلِ إِذَا عَمِلَ أَنْ يُّحْسِنَ
‘আল্লাহ ঐ শ্রমিককে ভালবাসেন যে সুন্দরভাবে কার্য সমাধান করে’। (সহীহুল জামে‘ হা/১৮৯১, হাদীছ হাসান)⏬
ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার
❇কিন্তু কোন কোন শ্রমিক মালিকের কাজে ফাঁকি দিয়ে নিয়মিত হাযিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন উত্তোলন করে থাকে, যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এজন্য তাকে ক্বিয়ামতের মাঠে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। ‘তিন শ্রেণীর লোকের দ্বিগুণ পুরস্কারের কথা ঘোষণা করে বলেন,
ثَلاَثَةٌ لَهُمْ أَجْرَانِ: رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الكِتَابِ، آمَنَ بِنَبِيِّهِ وَآمَنَ بِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَالعَبْدُ المَمْلُوكُ إِذَا أَدَّى حَقَّ اللَّهِ وَحَقَّ مَوَالِيهِ، وَرَجُلٌ كَانَتْ عِنْدَهُ أَمَةٌ فَأَدَّبَهَا فَأَحْسَنَ تَأْدِيبَهَا، وَعَلَّمَهَا فَأَحْسَنَ تَعْلِيمَهَا، ثُمَّ أَعْتَقَهَا فَتَزَوَّجَهَا فَلَهُ أَجْرَانِ “،
তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হল – وَالْعَبْدُ الْمَمْلُوْكُ إِذَا أَدَّى حَقَّ اللهِ وَ حَقَّ مَوَالِيْهِ ‘ঐ শ্রমিক যে নিজের মালিকের হক্ব আদায় করে এবং আল্লাহর হক্বও আদায় করে’। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১১, ‘ঈমান’ অধ্যায়)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন, لِلْعَبْدِ الْمَمْلُوْكِ الصَّالِحِ أَجْرَانِ-‘ সৎ শ্রমিকের জন্য দু’টি প্রতিদান রয়েছে’।⏬
📚আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
وَالَّذِىْ نَفْسُ أَبِيْ هُرَيْرَةَ بِيَدِهِ لَوْلاَ الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْحَجُّ وَبِرُّ أُمِّىْ لَأَحْبَبْتُ أَنْ أَمُوْتَ وَأَنَا مَمْلُوْكٌ
‘যেই সত্তার হাতে আবূ হুরায়রার প্রাণ তার কসম যদি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, হজ্জ ও আমার মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহারের ব্যাপারগুলো না থাকতো, তাহলে আমি শ্রমিক হিসাবে মৃত্যুবরণ করতে পছন্দ করতাম’। (বুখারী হা/২৫৮৪; মুসলিম হা/৪৪১০,🔚
ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার
0 Comments